প্রধান সূচি

পিরোজপুরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা

সন্ত্রাসী হামলার শিকার হচ্ছে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা

পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর-ইন্দুরকানী) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভপতি একেএমএ আউয়ালের সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার শিকার হচ্ছেন সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের কর্মী সমর্থক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। প্রায় প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে কুপিয়ে অথবা পিটিয়ে আহত করছে সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। নৌকার কর্মী-সমর্থকদের ওপর একের পর এক হামলায় চরম আতঙ্কে রয়েছে নৌকার সমর্থকরা। যে কোনো সময় বড় ধরণের ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টায় পৌরসভার সামনে হামলার শিকার হয় নৌকা সমর্থক সাব্বির আহম্মেদ। প্রকাশ্য দিবালোকে আউয়ালের ক্যাডাররা সাব্বির আহম্মেদকে উপর্যুপরি কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। তাকে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত ১০ মার্চ পাড়েরহাট বন্দরে হামলার শিকার হন নৌকার এজেন্ট ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হালিম হাওলাদার। লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে তার পায়ের হাড় ভেঙে দেয়া হয়। হামলার পূর্বে তাকে ঈগল প্রতীকের পক্ষে না থেকে নৌকার পক্ষে কাজ করায় কয়েকবার হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, নৌকা বিজয়ী হওয়ার পর ঈগল প্রতীকের প্রার্থী একেএমএ আউয়ালের সমর্থকরা পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই হামলা চালায়। তিনি বর্তমানে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এর আগে গত ২৩ ফেব্রæয়ারি রাত ৮টায় নৌকা প্রতীকের এজেন্ট, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের সভাপতি ফয়সাল আকনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম আউয়ালের ঈগল প্রতীকের সমর্থক (ক্যাডার) সাইদুল ফরাজি, মিজান, সাইদুল ফকির ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী জামালসহ আরো ১০-১২ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এ হামলা চালায়।
তারা ফয়সালকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে। তার শরীর অগণিত কোপে ক্ষতবিক্ষত হয়। পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যায়। হাতের আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, মাথার হাড় কেটে বিভক্ত হয়ে যায়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পৌনে ৩ ঘণ্টাব্যাপী অপারেশন হয়। তিনি আইসিউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। তার পরিবার থেকে জানানো হয়, ফয়সাল মৃত্যুর সাথে লড়ছেন।
এ ঘটনায় র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ৩ জন আসামি গ্রেফতার করে। পরে অন্য তিন আসামি আদালতে জামিন নিতে এলে আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসামিরা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএমএ আউয়ালের ক্যাডার।
এর আগে, গত ২২ ফেব্রæয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির তলবি সভা এবং এডহক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হয়ে ৫ জন আইনজীবী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় একেএমএ আউয়ালের সমর্থিত জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন খান ও সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক খানের নির্দেশে বহিরাগতরা হামলা চালিয়ে ৫ জন জনকে গুরুতর আহত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আহত আইনজীবীরা। আহত ৫ আইনজীবী শ ম রেজাউল করিমের সমর্থক। এ ঘটনায় থানায় নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা হলেও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
গত ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নৌকার সমর্থক মো. সজিব হাওলাদার তার বাড়ি পশ্চিম ডুমুরিতলায় আক্রান্ত হন। তার শরীরে দা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে অসংখ্যবার কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। এ ঘটনায় পিরোজপুর সদর থানায় ১৭ জানুয়ারি মামলা হলেও অদ্যাবধি কেউ গ্রেফতার হয়নি। এমনকি নৌকা প্রতীকের এজেন্ট শাকিলকে বেধড়ক মারধর করা হয় শংকরপাশা ইউনিয়নে।
এছাড়া, বিক্ষিপ্তভাবে হামলা হয়েছে একাধিক নৌকার সমর্থকের ওপর। উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে নৌকা সমর্থক ও কর্মীরা আতঙ্কে আছেন বলে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপরে জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জাহিদ হাসান পিরু বলেন, সংসদ নির্বাচনোত্তর একের পর এক আমাদের এমপি মহোদয়ের কর্মীরা পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্যাডাদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু এর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। আর এ ঘটনাগুলোয় পুলিশের ভ‚মিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আমি চাই এই সন্ত্রাসী হামলাগুলোয় যারা জড়িত ও তাদের গডফাদারদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক।
শ ম রেজাউল করিম এমপি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল প্রকার সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করেও বিজয়ী হতে না পেরে নৌকার সমর্থক ও কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর পরিবারের ভাড়াটিয়া খুনি ও সন্ত্রাসীরা। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতির আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান। আহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ না করে ঈগল প্রতীকের বিদ্রোহী প্রাথী একেএমএম আউয়ালের পক্ষে কাজ করার জন্য নানা প্রকার হুমকি ও প্রলোভন উপেক্ষা করেছিল তারা। নির্বাচনে তারা হেরে যাওয়ায় প্রতিশোধ নিতেই একের পর এক নৃশংস হামলা করা হচ্ছে।
শ ম রেজাউল করিম জানান, তিনি সকল ঘটনা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মহা-পুলিশ পদিরর্শকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করে প্রতিকারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, পিরোজপুরের অধিকাংশ হত্যা ও সহিংস ঘটনার পিছনে গডফাদার রয়েছে। তাদের গ্রেফতার করা না হলে পিরোজপুরে অনেকে হত্যাকাÐের শিকার হতে পারে। তিনি পিরোজপুরের জনসাধারণের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছেন।
উল্লেখ্য, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে শহরে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া হয়। জেলা যুবলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলু, জেলা মৎস্যজীবী লীগের আহŸায়ক শিকদার চান, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ সজল এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এসএম বায়েজিদ হোসেনের বাড়িতে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ঈগল প্রতীকের প্রার্থী একেএমএম আউয়ালের সমর্থকরা।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ফয়সাল আকনের ঘটনায় ৮ জন আসামির মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। আর সব মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বাসাবড়িতে হামলার এ তথ্য আমার কাছে নেই। সাব্বিরকে আহতের ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে দুই-চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।






উত্তর দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.