প্রধান সূচি

পিরোজপুরের দুটি আসনে নৌকা ঝুঁকিতে

পিরোজপুরের দুটি আসনে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। তারা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ দুই আসনে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা নৌকার প্রধান প্রতিদ্বন্ধি।
এদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পিরোজপুর-১ আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বাচনী সংিহসতায় ইতিমধ্যে এক যুবক নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনাসহ নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও নৌকার সমর্থক আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িতে গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে।
পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-ইন্দুরকানী) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন এ আসনের বর্তমান এমপি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাকে প্রথমবার পিরোজপুর-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরে তাকে প্রথমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এবং পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শ ম রেজাউল করিম এমপি ও মন্ত্রী হয়ে গত ৫ বছরে পিরোজপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিদ্যুতের জাতীয় গ্রীড লাইন স্থাপনসহ স্কুল-কলেজের ভবন নির্মাণ, নির্বাচনী এলাকার তিনটি উপজেলায় সড়ক-কালভার্ট, ব্রীজ নির্মানসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তবে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রী হলেও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ শুরু থেকেই তাকে মেনে নিতে পারে নি। সে অবস্থা এখনও বিরাজমান। তবে একজন ক্লীন ইমেজের লোক হওয়ায় এবং বিগত ৫ বছরে তার বিরুদ্ধে কোন অননিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ না থাকায় সাধারণ মানুষের কাছে তার (রেজাউল করিম) বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে নাজিরপুরের দিঘিরজান বাজার থেকে গণসংযোগের মাধ্যমে নৌকার প্রার্থী শ ম রেজাউল করিম আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।
এদিকে, আগামী নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ২০০৮ ও ২০১৪ সালের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত এবং পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল। তিনি পর পর দুইবারের এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় তার (একেএমএ আউয়াল) রয়েছে একটি শক্ত বলয়। এছাড়া তার মেজ ভাই মো. হাবিবুর রহমান মালেক পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র, সেজ ভাই মো. মুজিবর রহমান খালেক পিরোজপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এবং সেজ ভাইয়ের স্ত্রী সালমা রহমান হ্যাপী পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আগামী নির্বাচনে একেএমএ আউয়াল তার ভাইয়ের জনপ্রিয়তাকেও কাজে লাগিয়ে আগাতে চান। অন্যদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার সুযোগে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পয়ায়ের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় সকল কমিটি রয়েছে তার (একেএমএ আউয়াল) সমর্থিত লোকজন। ফলে আওয়ামী লীগের এ অংশটি দলীয় নৌকার প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএমএ আউয়ালের পক্ষে মাঠে নেমেছে।
প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকেই জোরালোভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএমএ আউয়াল। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
সবকিছু মিলিয়ে ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসনে নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগের নৌকা বনাম আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী পক্ষে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের তেমন কোন নেতা মাঠে নামছেন না। তবে ত্যাগী ও আওয়ামী লীগের পদ বঞ্চিত নেতৃবৃন্দসহ সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের একটি বড় অংশ দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পক্ষে কাজ করে চলছেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এডভোকেট খান মো. আলাউদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দিলেও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন যে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবে। তাই পিরোজপুর-১ আসনে আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়ালের পক্ষে নির্বাচন করছি। কেননা আওয়ামী লীগের সুখ, দু:খে সব সময় একেএমএ আউয়াল ও তার পরিবারের সদস্যরা রয়েছে। আমরাও তাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো।
এদিকে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পিরোজপুর-১ আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বাচনী সংিহসতায় ইতিমধ্যে লালন ফকির নামে এক যুবক নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও নৌকার সমর্থক আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িতে গুলি ও হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শ ম রেজাউল করিম অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে মারমুখী ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএমএ আউয়াল। সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে যে কোন মূল্যে নির্বাচিত হওয়ার জন্য নানান সন্ত্রাসীমূলক কাজ করে চলছেন তিনি ও তার পরিবার। তারা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নানা হুমকি দিয়ে চলছেন। তাদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হচ্ছে। নৌকা প্রতীকের অফিস ভাংচুর করছে একেএমএ আউয়ালের সন্ত্রাসী বাহিনী। শহরে অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে মোটর সাইকেল মহড়া দিয়ে ব্যবসায়ী ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলছে।
অন্যদিকে, পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী-নেছারাবাদ) আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের শরীক দল জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু) চেয়ারম্যান এবং এ আসনের বর্তমান এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। তিনি একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। তবে সে সময়ে তিনি জেপির দলীয় প্রতীক বাইসাইকেল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এবারই প্রথম তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি বিভিন্ন মেয়াদে পিরোজপুর-২ আসনে ৭বার এমপি ছিলেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীসহ ৫ বার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জেপি’র দলীয় প্রধান হলেও বর্তমানে নির্বাচনী এলাকায় তার দলের প্রভাব জোরালো নয়। আর সে কারণেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রত্যক্ষ সমর্থনের জন্যই মূলত: এবারের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তবে সেক্ষেত্রে তিনি আওয়ামী লীগের শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন।
পিরোজপুর-২ আসনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর প্রধান প্রতিদ্বন্ধি হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মহারাজ। তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের একটি বড় অংশ মহারাজের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। এছাড়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করায় তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এছাড়া সাধারণ মানুষের কাছেও তিনি বেশ জনপ্রিয়। ফলে ভোটের মাঠে মহিউদ্দিন মহারাজকে নিতে বেগ হতে হবে নৌকার প্রার্থীকে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, আমি দলের কাছে মানোনয়ন চেয়েছিলাম। দল এখানে জোটের প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তবে আমাদের দলের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের লোকজন নির্বাচন করতে পারবে বলে ঘোষণা দেওয়ায় আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার আগামীর ষ্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একজন কর্মী হতে চাই। বিগত দিনে একানে জোটের শরীক জাতীয়পার্টি-জেপি’র থেকে এমপি হলেও তিনি এলাকার উন্নয়ন করনে নি। তিনি আওয়ামী লীগ নিধনে ছিলেন। স্থানীয় সকল নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং সাধারণ জনগণ আমাকে বিজয়ী করার মাধ্যমে তার জবার দিবে।






উত্তর দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.