প্রধান সূচি

তরুণ প্রজন্মের লেখক মিজানুর রহমান

সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান এর জন্ম ১৯৮৫ সালের ২৫ নভেম্বর। তিনি পিরোজপুর জেলার একজন প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও আদর্শবান শিক্ষক। তিনি পিরোজপুর সদর উপজেলার ২নং কদমতলা ইউনিয়নের খানাকুনিয়ারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান। মা জামিলা খাতুন। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। তাঁর বাল্যকাল অতিবাহিত হয় নানা দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে।
একটি কৃষক পরিবারে সমূহ প্রতিবন্ধকতা নিয়েই তাঁর বেড়ে উঠা। তাই আর্থিক সংকটের কারণে এক সময় তাঁর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। মানসিকভাবে তিনি ভেঙ্গে পড়েন। একটি বছর তাঁর জীবন থেকে হারিয়ে যায়। পড়াশোনা বন্ধ হবার উপক্রম, ঠিক এই সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়ান তাঁর শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন। তাঁরই উৎসাহ ও উদ্দীপনায় তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর তাড়া অনুভব করেন। এক বছর শিক্ষা বিরতির পর ২০০৪ সালে তিনি আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ লিখতেন। ২০১১ সালে তিনি যখন শিক্ষকতায় আসেন, তখন থেকেই তিনি শিক্ষা বিষয়ে লিখতে শুরু করেন। একাধারে তিনি দশ বছরের অধিক সময় দৈনিক প্রথম আলোর ‘পড়াশোনা’, দৈনিক ইত্তেফাক এর ‘অনুশীলন’ ও দৈনিক নয়া দিগন্ত এর ‘সিলেবাস’ বিভাগে লেখালেখি করেন। এর মধ্যে আবার কিছু সময় ধরে ঢাকা পোস্টের ‘পড়াশোনা’ বিভাগেও নিয়মিত লেখক হিসেবে লেখালেখি করেছেন।
পত্রিকা থেকেই মূলত তাঁর লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। এখান থেকেই অনুপ্রেরণা। তিনি যখন এই সব পত্রিকাগুলোতে লেখক হিসেবে লিখতেন তখন থেকে নিজের মধ্যে সাহিত্যের প্রতি এক ধরণের টান অনুভব করেন। আরেকটি বিষয় তাঁকে প্রবণভাবে আকৃষ্ট করেছে, ‘নিজের ভেতর থেকে তিনি মানুষের জন্য কিছু রেখে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করতেন। যার জন্য তিনি সাহিত্য অঙ্গনকেই বেশি উপযুক্ত বলে মনে করতেন।’ যেহেতু তিনি সাহিত্যের ছাত্র, তাই স্বাভাবিক কারণে এমনটিই তিনি অনুভব করবেন, এটিই সংগত। ২০০৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে অনার্স ও ২০০৮ সালে একই বিভাগ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন।
শুরু হলো তাঁর ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি। সাহিত্যের উপরে বিখ্যাত সব গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধগুলো একাধারে পড়তে লাগলেন। নিজেকে তৈরি করলেন আগামীর জন্য। প্রথমেই শিশু সাহিত্য নিয়ে কাজ করতে শুরু করলেন। দৈনিক ইত্তেফাকের ‘কচিকাঁচার আসরে’ তাঁর প্রথম গল্প ছাপা হলো। এরপর একাধারে বেশ কিছু পত্রিকায় লিখতে লাগলেন। প্রিয়জন বিভাগ তাঁর লেখার একটি প্রিয় জায়গা হয়ে উঠল। এক সময় এই বিভাগেও লেখা বন্ধ করে দিলেন। লিখতে শুরু করলেন দৈনিক নয়া দিগন্তের ‘নিত্যদিন’ বিভাগে। ছাপা হলো বেশ কিছু গল্প। ‘রাজার জাদুর ড্রাম’ নামে একটি অনূদিত গল্প বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে নিত্যদিন বিভাগে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘শিশু’ পত্রিকায়ও তাঁর গল্প প্রকাশিত হলো। লেখালেখির ক্ষেত্রে তিনি কোথাও স্থায়ী হননি, মাত্র দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। শিশুতোষ গল্প নিয়ে পরপর তাঁর চমৎকার দুটি বই প্রকাশিত হলো। ‘প্রিয়তা’ ও ‘টুনটুনির গল্প’। বেশ পাঠকপ্রিয়তাও পেল বই দুটো। এছাড়াও শিশুতোষ গল্প নিয়ে তাঁর বেশ কয়েকটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
একজন সমাজ সচেতন লেখক হিসেবেই মূলত তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। তরুণ সমাজে নৈতিক পতন দেখে তিনি মর্মাহত হতেন। প্রতিবাদী লেখক হিসেবে তিনি সমাজের সেই অসংগতির বিষয়গুলোই লেখায় তুলে ধরেন। কত সাদরে মানুষ অন্যায়কে ন্যায় বলে মনে করছে! অপরাধ করেও নিজেকে অপরাধী ভাবছে না! তিনি তরুণ প্রজন্মকে আশার বাণী শোনাতে চান। যাতে তারা মানুষের মাঝে মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে চায়। যে সুর প্রতিধ্বনিত হয়েছে তাঁর গল্প গল্পগ্রন্থ ‘স্বপ্নবোনা মন’, ‘দুষ্ট মেয়ে আয়মান’ এ। ‘মধ্যরাতের হাসি’ উপন্যাসেও তিনি সমাজ পরিবর্তনের নানা দিক তুলে ধরেছেন, তাঁর বিশ্লেষণধর্মী লেখায়।
দিগন্ত সাহিত্য, অন্য এক দিগন্ত, নতুন এক মাত্রা, অগ্রপথিক সহ বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকী ও লিটল ম্যাগাজিনে তিনি সাহিত্য নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। একজন কলাম লেখক হিসেবে তিনি বেশ আগেই সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক যুগান্তর, ঢাকা টাইমস ও আমার সংবাদ পত্রিকায় বহু দিন ধরে কলাম লিখে আসছেন। এ পর্যন্ত তাঁর দুইশো এর অধিক ইসলামবিষয়ক প্রবন্ধ জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রবন্ধগুলোর অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক নয়া দিগন্তের ‘ইসলামি জীবন’, দৈনিক যুগান্তর এর ‘ইসলাম ও জীবন’, দৈনিক ইত্তেফাক এর ‘ধর্মচিন্তা’, দৈনিক আমার সংবাদ এর ‘ইসলাম’ ও আমাদের সময় ডট কম পত্রিকায়। তিনি আন্তর্জাতিক মানের একটি গণমাধ্যম ‘পার্স টুডে’ তেও কলাম লিখেছেন।
তিনি পিরোজপুর জেলার শ্রেষ্ঠ শ্রেণিশিক্ষকও নির্বাচিত হয়েছেন। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তিনি উপকারী ও সদা হাস্যোজ্বল। অল্পে পরিতৃপ্ত। ‍নিজ দায়িত্ব পালনে একনিষ্ঠ। জাতীয় গণমাধ্যম দৈনিক খোলা কাগজ তাঁর এই কর্তব্যনিষ্ঠা নিয়ে ‘আদর্শ শিক্ষক মিজানুর রহমান’ নামে একটি ফিচার প্রকাশ করে । রেডিও টুডে তাঁকে নিয়ে ‘এক নিভৃতচারী লেখকের গল্প’ শিরোনামে একটি পূর্নাঙ্গ ফিচারও প্রকাশ করেছে।
তিনি ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ থেকে ‘নাজিব মাহফুজ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পের সমাজচিত্র : তুলনামূলক পর্যালোচনা’ শিরোনামে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। এই লেখকের পিএইচ.ডি ভর্তির প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
ব্যক্তি জীবনে তিনি সহজ সরল ও একজন সাদা মনের মানুষ। ২০০৬ সালে তিনি রাহিমা খানমের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। দীর্ঘদিন ধরে হতাশায় ভুগছিলেন। অবশেষে এই দম্পতির ঘর আলোকিত করে দীর্ঘ বারো বছর পর জন্ম হলো তিন কন্যা সন্তানের । বড় মেয়ে আফিয়া আয়মান। মেজো মেয়ে আফিয়া আনজুম আর ছোট মেয়ে আফিয়া জাহিন।






উত্তর দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.