প্রধান সূচি

রাত পোহালেই পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

পোষ্টার-মাইকিংয়ে স্থানীয় এমপির নাম নেই, সম্মেলনস্থলে ঢুকতে পারবে না সাধারণ নেতা-কর্মীরা : চাপা উত্তেজনা

রাত পোহালেই রবিবার পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলনকে ঘিরে পিরোজপুর আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে চাপা উত্তেজনা ও ক্ষোভ। সম্মেলনের জন্য লাগানো পোষ্টারে নাম নেই স্থানীয় এমপি (পিরোজপুর-১ আসন) এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করীমের। এছাড়া সম্মেলন উপলক্ষে করা মাইকিং প্রচারণাও তার নাম বলা হয় নি। অন্যদিকে, সম্মেলনস্থল সংর্কীর্ন হওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদেরও সেখানে স্থান সংকুলান হবে না। জানা গেছে, সম্মেলনস্থল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে শুধুমাত্র সম্মেলনের অতিথিবৃন্দ এবং কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা বসবেন। কার্ডধারী কাউন্সিলর ও ডেলিডেট ছাড়া অন্য কোন নেতা-কর্মীকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ঢুকতে দেওয়া হবে না। প্রবেশ পথে প্রশাসনের মাধ্যমে কার্ড চেক করে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট মাঠে ঢোকানো হবে। এ লক্ষে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে ঢোকার একটি মাত্র প্রবেশপথ খোলা রেখে অন্যসব পথ আটকে দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ তৃর্ণমূল ও সাধারণ নেতা-কর্মী এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঝে উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, এক পক্ষের নিয়ন্ত্রণে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেখানে যাতে তাদের অনুসারী ছাড়া অন্য কোন নেতার অনুসারীরা ঢুকতে না পারে সেজন্য সব আয়োজন সেভাবে করা হয়েছে। এটা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে না, এটা একটি পক্ষের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নিজস্ব লোকজনের সম্মেলন হচ্ছে।
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবরীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলু জানান, সম্মেলনস্থলে এক হাজার বেশী লোকেরও বসান স্থান হবে না। এতো ছোট্ট জায়গায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। আর প্রথম অধিবেসনতো সকলের জন্য উম্মুক্ত। সেখানে তো হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সমর্থক আসবে। কিন্ত তাদের বসার জন্য কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তিনি বলেন, সব কিছুই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়ালের একপক্ষীয় ইচ্ছেমতো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হলেও শনিবার রাতেও কোন কাউন্সিলর কার্ড পাননি। কাউন্সিলর ও ডেলিগেট তালিকা ও কার্ড প্রদান নিয়েও নানা অনিয়ম করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
পোষ্টার, মাইকিংয়ে স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীর নাম না থাকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম এ হাকিম হাওলাদার বলেন, সম্মেলনের বিভিন্ন বিষয়ে তার (এম এ হাকিম) কোন মতামত নেওয়া হচ্ছে না। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়াল তার অনুসারীদের নিয়ে সবকিছু করছেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএমএ আউয়ালের মোবাইল নাম্বারে কল দিলে তিনি তা রিসিভ করে মিটিং এ ব্যস্ত আছেন বলে লাইন কেটে দেন।
এদিকে, সম্মেলনকে ঘিরে পিরোজপুরে চলছে সাজ-সাজ রব। বিভিন্ন সড়কে তোড়ণ নির্মাণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টানানো হয়েছে ব্যানার ফেস্টুন, বিলবোর্ড। পিরোজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে চলছে মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মান শেষ পর্যায়ের কাজ। শহীদ মিনারের সামনের পৌরসভার রিজার্ভ পুকুরের চারিপাশে জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকাসহ নানান রংয়ের পতাকা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন সাজে সাজানো হয়েছে। রাতে করা হয়েছে আলোকসজ্জাও। আওয়ামী লীগের জেলা সম্মেলন উপলক্ষে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরে মিছিল ও সমাবেশ করছে।
সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বিষেশ অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আক্তার, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়ুয়া, শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন এমপি, আনিসুর রহমান এবং গোলাম কবীর রাব্বানী চিনু। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল এবং সঞ্চালনা করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম এ হাকিম হাওলাদার।
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ন পদে স্থান পেতে অনেকে আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে লবিং, তদবীর করে চলছেন। তবে সভাপতি পদে এখন পর্যন্ত বর্তমান সভাপতি একেএমএ আউয়ালের একক নামই আলোচনা রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের বতর্মান সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম এ হাকিম হাওলাদার, পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রশাসক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন মহারাজ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী, পিরোজপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর সরকারী সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক জিএস রেজাউল করীম মন্টু সিকদার, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও পিরোজপুর সরকারী সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক ভিপি শেখ ফিরোজ আহম্মেদ।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১১ ডিসেম্বর সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঐ সম্মেলনে পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি একেএমএ আউয়ালকে সভাপতি এবং এডভোকেট এম এ হাকিম হাওলাদারকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের ৪ বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেলা আওয়ামী লীগের এ সম্মেলন।






উত্তর দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.