ভান্ডারিয়া-কাঠালিয়া সড়কে গাছ উপড়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়াসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্র ও শনিবার মুষলধারে টানা বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে মানুষজন। বৃষ্টি আর জোয়ারের অস্বাভাবিক পানিতে উপজেলার পানবরজ, কলা, পেপেসহ মৌসুমি সবজি ও আমন ফসল পানিতে ডুবে আছে।
জোয়ারের পানি বৃদ্ধির ফলে ভান্ডারিয়া পৌর বাজারের রাস্তাসহ পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। গতকাল শনিবার হাটের দিন থাকলেও বাজারে জনসমাগম দেখা যায়নি চোখে পড়ারমত।
এদিকে, শনিবার ভান্ডারিয়া-কাঠালিয়া মানিক মিয়া সড়কে বিশাল এক গাছ পড়ে প্রায় তিন ঘন্টা পূর্ব অঞ্চলের সাথে পশ্চিম অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা প্রায় দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে গাছ অপসারন করে সড়ক জনচলাচল স্বাভাবিক করে।
পথচারী আরিফ জানান, বাজারে যেভাবে পানি প্রবেশ করছে এতে অতি দ্রুত বাজারের শহর রক্ষা বেরিবাঁধ সংস্কার ও নির্মান প্রয়োজন।
এদিকে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষক কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানান, এবছর উপজেলায় ৮হাজার ১৯ হেক্টর জমিতে উফসী ও স্থানীয় জাতের আমন চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে পানিতে ডুবে থাকায় ৫% ক্ষতির আশংকা আছে এবং ৪২ হেক্টর জমিতে কলা, পেপে, পানবরজ ও মৌসুমি সবজী চাষ করা হয়েছে। অতি বৃষ্টি ও জোয়ারে পান বৃদ্ধির ফলে ১০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। যা টাকার অংকে প্রায় ৩ কোটি টাকা।
ভান্ডারিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক শাহীন আক্তার সুমী জানান, ৩ দিনের বন্যায় মাঠ পর্যায়ে কি পরিমান ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তারা মাঠে রয়েছেন। তাদের রিপোর্ট পেলে সঠিক বিষয়টি জানানো যাবে।
মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, নি¤œচাপের প্রভাবে গত ৩ দিনের টানা বৃষ্টি এবং অমবশ্যার জোয়ারের পানিতে মঠবাড়িয়ার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে আগাম রবি শষ্য এবং মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষতির সংবাদ পাওয়া গেছে। বৃষ্টিতে উপজেলার জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় উপজেলায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানির সাথে অমবশ্যার জোয়ারের পানিতে মঠবাড়িয়া পৌর শহরের দক্ষিণ বন্দর, দধিভাংগা বাজার ও নি¤œাঞ্চলের মাঠ-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির প্রবল চাপে সওজের ধানিসাফা-মিরুখালী-আমুয়া সড়কসহ কয়েকটি সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙ্গে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, পানিতে তলিয়ে গিয়ে আগাম রবি শষ্যের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে বলে চাষিরা জানান। ওয়াহেদাবাদ গ্রামের কৃষক মো. জয়নুল আবেদীন(৫৩) জানান, তার ৮ কাঠা জমির (২৬ শতাংশ) খিরাই ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান জানান, বিক্ষিপ্তভাবে কিছু রবি শষ্যের ক্ষতি হতে পারে। তবে মাঠ থেকে আমন ধান কাটার পর রবি শষ্যের মৌসুম শুরু হবে। আমন ধানের এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতি হয়নি বলে তিনি জানান।
অপরদিকে, বিভিন্ন স্থানে মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উপজেলার কচুবাড়িয়া গ্রামের মেসার্স হাওলাদার মৎস্য এন্ড পোল্ট্রি ফিডের মালিক মো. দুলাল হাওলাদার জানান, তার ২ একর জমির মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে ১০/১২ লাখ টাকার তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ও গ্রাস কার্প মাছ ভেসে গেছে। ওয়াহেদাবাদ গ্রামের আ. রহিম খন্দকার জানান, তার প্রায় অর্ধ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
এ ব্যাপারে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম জানান, বর্তমানে মা ইলিশ রক্ষায় বলেশ্বর নদে অভিযানে ব্যস্ত থাকায় ক্ষয়-ক্ষতির সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি। অভিযান শেষে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করে জানাবেন বলে তিনি জানান।
