প্রধান সূচি

বঙ্গবন্ধু’র চেতনায় আমাদের রাজনীতি করতে হবে ….. আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

সাইফুল্লাহ হুমায়ুন ও শংকরজিৎ হালদার :
জাতীয় পার্টি (জপি)’র চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু-স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-উন্নয়নের প্রশ্নে জেপি ও আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। বঙ্গবন্ধু আঁতাত, তোষামোদ বা সমঝোতা করে দেশের স্বাধীনতা আনেন নি। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে মানুষের জন্য আহার-বাসস্থান-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধু’র চেতনায় আমাদের রাজনীতি করতে হবে।
আজ শুক্রবার রাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে ভান্ডারিয়ায় উপজেলা জেপি’র উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার জন্য দেশ স্বাধীন করেন নি। স্বাধীনতার জন্য তিনি অনেক জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। তারপরও আন্দোলনকে তিনি ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তাঁর কন্ঠ ছিল বজ্র কণ্ঠ। ৭০’র নির্বাচনে বাঙ্গালী সংখ্যাগরিষ্ঠ লাভ করেছিল তাঁরই নেতৃত্বে। বাঙ্গালীর স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার এই রায়কে পাকিস্তানীরা মেনে নেয় নি। বরং অন্যায়-অত্যাচার করে আমাদের দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময় জাতিকে মুক্ত করেছেন। আমরা ষাটের দশকে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিলাম। এ সময় তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকদের পেটোয়া ছাত্র নেতা আমাদের উপরে অনেক নির্যাতন চালাতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের আমাদের রুম পুড়িয়ে দিত। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম এ অন্যায়-অত্যাচার প্রতিহত করতে হবে। প্রয়োজনে আত্মাহুতি দিতে হবে। ওই সময় আমরা কতিপয় ছাত্র নেতা এই জুলুমের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করি এবং সারা দেশে তা ছড়িয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু নেতা ও ছাত্রদের ¯েœহ করতেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী, সাহসী ও অকুতভয়। নেতা হতে হলে তার মত সাহসী হতে হবে। ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর দেশ যখন স্বাধীন হলো, পাক বাহিনী যখন আত্মসমর্পণ করলো তখন তিনি পাকিস্তানী কারাগারে বন্দী ছিলেন। ৭২’র ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসেন এবং তাঁর এই ফিরে আসার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়। তখন যদি তিনি ফিরে না আসতে পারতেন তাহলে দেশে এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে নিপতিত হতো।
আনোয়ার হোসেন বলেন, বন্ধু হিসেবে ভারত সেদিন আমাদের স্বাধীনতার জন্য সাহায্য করেছে, খাদ্য ও আশ্রয় দিয়েছে, যুদ্ধ করেছে এবং স্বাধীনতার ৯০ দিনের তাদের সৈন্য ফিরেয়ে নিয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশে এর নজির নেই, অনেক দেশে বন্ধু দেশের সাহায্যে স্বাধীনতা পাওয়ার পরও সেখানে বিদেশী সৈন্য মোতায়েন ছিল। ভারতীয় সৈন্যদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সে দেশের সরকারকে সম্মত করতে সক্ষম হওয়ার বিষয়টি ছিল বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী, সাহসী ও দেশপ্রেম প্রসূত রাজনীতির অবদান। তাই আমাদেরকে তাঁর এই চেতনার রাজনীতিকে অনুসরণ, ধারণ ও হৃদয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আলোচনা সভা শেষে জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বঙ্গবন্ধুর জন্ম বার্ষিকীর কেক কাটেন এবং দোয়া ও মোনাজাতে শরিক হন।
উপজেলা জেপি’র আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল হক মনি জোমাদ্দারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুল ইসলাম তালুকদার উজ্জল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফায়জুর রশীদ খসরু জোমাদ্দার, ভান্ডারিয়া মাজেদা বেগম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন মামুন, উপজেলা জেপি’র সদস্য সচিব ও ধাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাফিজুর রশীদ তারেক, উপজেলা জেপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মৃধা, জেপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান চৌধুরী, যুবলীগের উপজেলা আহ্বায়ক এনামুল কবির তালুকদার টিপু, যুব সংহতির নেতা মোস্তফা সিকদার প্রমুখ।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, জেপি নেতা ইউসুফ আলী আকন, পিরোজপুর জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল হাই হাওলাদার ও রেজাউল হক রেজভী, ভিটাবাড়িয়ার ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল কবির পান্না, যুব সংহতির উপজেলা আহ্বায়ক শহীদুজ্জামান রাজু মল্লিক ও সদস্য সচিব মনির সরদার, ছাত্রলীগের উপজেলা সভাপতি এহসাম হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক মো. কাইয়ূম জোমাদ্দার, ছাত্র সমাজের উপজেলা আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম শিমুল ও সদস্য সচিব রাহাত জোমাদ্দার।
রাতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ভান্ডারিয়া ইকড়ি ইউনিয়নের ঝাউতলা ব্রীজ থেকে ইকড়ি বাসষ্ট্যান্ড পর্যন্ত মরা খালের পুনর্খননের উদ্বোধন করেন। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় মরা খাল সমূহ পুনর্খনন ও বনায়ন প্রকল্পের আওতায় গৃহীত এ কাজ উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মহিউদ্দিন মহারাজ, বন বিভাগের বাগেরহাটের ডিএফও মোল্যা রেজাউল করিম।
এরপর মন্ত্রী ইকড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন। এছাড়া পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এদিন ইকড়ি ইউনিয়নের আতরখালী, সিংখালী ও ইকড়ি গ্রামের পল্লী বিদ্যুতের নতুন লাইনের উদ্বোধন করেন। এ সব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
সকালে মন্ত্রী ভান্ডারিয়ায় উপজেলার সুবিধা বঞ্চিত ব্যক্তি ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রীর ঐচ্ছিক তহবিলের অর্থের চেক বিতরণ করেন। এসময় ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলের অর্থের চেক বিতরণ, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ঢেউ টিন ও অর্থের চেক এবং জলবায়ূ ট্রাষ্ট ফান্ড নির্মিত ঘরের চাবি উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় ভান্ডারিয়া উপজেলা জেপি’র আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল হক মনি জোমাদ্দার, উপজেলা চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম তালুকদার উজ্জল, ইউএনও মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Please follow and like us:





উত্তর দিন

Wordpress Social Share Plugin powered by Ultimatelysocial