নাজিরপুরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন : স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান আ’লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া
ফিরোজ মাহমুদ, নাজিরপুর :
পিরোজপুরের নাজিরপুরে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের এক সন্তান। এ ঘটনায় স্বাধীনতার স্বপক্ষের সমর্থকসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলার ৩নং দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান ওয়ালী উল্লাহ তৎকালীন স্থানীয় এমপি যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদী’র সমর্থন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। তখন ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এফ. এম. রফিকুল আলম বাবুল সামান্য ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত পরবর্তী নির্বাচনে ওয়ালী উল্লাহ ভোল পাল্টে স্থানীয় সরকার দলীয় এমপি একেএমএ আউয়ালের হাত ধরে পুনরায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাবুলকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠানের ঘোষণা আসার পরপরই স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান সুচতুর ওয়ালী উল্লাহ ২০১৬ সালে নিজ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে নিজেকে তালিকাভুক্ত করেন।
অনুসন্ধানকালে আরো জানা যায়, ওয়ালী উল্লাহ’র পিতা মাওলানা মফিজুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল এবং তার চাচা মীম ফজলুর রহমান বৃহত্তম বরিশাল জেলার জামায়াত ইসলামী’র আমির ছিল। সে ১৯৭০ সালে নাজিরপুর ও বানারীপাড়া থানার প্রদেশিক পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতের দাড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ১৯৭২ সালে তার চাচা মীম ফজলুর রহমান দালাল আইনে অভিযুক্ত হয়ে দুই বছর কারাভোগ করে। এরপর ১৯৯৬ সালে স্বরূপকাঠী-বানারীপাড়া আসনে জামায়াতের দলীয় প্রার্থী হিসেবে দাড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে। এই নির্বাচনে ওয়ালী উল্লাহ তার চাচার সাথে নির্বাচনীয় প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ২০০৮ সালের ২০ জুলাই মাওলানা মীম ফজলুর রহমান মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যু’র পূর্ব পর্যন্ত সে সক্রিয়ভাবে জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওয়ালী উল্লাহ যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’র কর্মী হিসেবে কাজ করে। যুদ্ধাপরাধী সাঈদী এমপি নির্বাচিত হওয়ায় তার আশির্বাদ নিয়ে চেয়ারম্যান পদে ৩ বারের পরাজিত হওয়া ওয়ালী উল্লাহ ২০০৩ সালের ৩রা মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথমবার দেউলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়। ওয়ালী উল্লাহ জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছে মর্মে তৎকালীন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর যুদ্ধাপরাধী সাঈদী তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ২০০৩ সালের জুন মাসে ওয়ালী উল্লাহ’র বাড়ীতে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ওয়ালী উল্লাহ খোলস পাল্টিয়ে এখন পাক্কা আওয়ামীলীগার সেজে নৌকা প্রতীক পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, চেয়ারম্যান ওয়ালী উল্লাহ’র পিতা মাওলানা মফিজুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিল। তার সহায়তায় পাক বাহিনী অনেক বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। শুনেছি তার ছেলে এখন বঙ্গবন্ধুর নৌকা প্রতীক পেতে ওঠেপড়ে লেগেছে। এটা আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অত্যন্ত লজ্জাজনক।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান ওয়ালী উল্লাহ’র মুঠোফোন ০১৭৩৫-৪৭৮০১৪ নাম্বারে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে কথা হলে দেউলবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল চন্দ্র মিস্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালে ওয়ালী উল্লাহ আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। বর্তমানে সে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। আমার জানা মতে ইতোপূর্বে সে আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল না।’
