ভারতীয় পুলিশের তথ্য
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পান্নাকে শ্বাসরোধে হত্যা : তবে পরিবারের দাবী ভিন্ন
সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইসহাক আলী খান পান্নাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি। তবে পান্নার পরিবার ও আত্মীয়দের দাবি, এ তথ্য সঠিক নয়। তাদের দাবি পান্না হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসাহাক আলী খান পান্নার মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল অনেক আগেই। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তের কাছেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে পান্নাকে। রাজ্য পুলিশের বেশ কয়েকটি সূত্র জানায়, পান্নার পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে বোঝা যায়, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
মেঘালয় পুলিশ জানায়, গত ২৬ আগস্ট মেঘালয়ের পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড়ের দোনাভোই গ্রামের একটি সুপারি বাগানের মধ্যে পান্নার অর্ধগলিত মৃতদেহ পাওয়া যায়। এই এলাকাটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। পান্নার সাথে থাকা পাসপোর্ট থেকে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে।
পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়, মৃত্যুর কারণ হলো শ্বাসরোধের কারণে সৃষ্ট শ্বাসকষ্ট। তার কপালে আঘাত এবং ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তার মরদেহ ফরেনসিক বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন পান্না। পরে তিনি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল এলাকা দিয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি এলাকায় প্রবেশ করেন। পরে তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
পান্নার নিকটাত্মীয় ও খুবই আস্থাভাজন পিরোজপুর জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন খান জানান, পান্নাকে যে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ভারতীয় পুলিশের ও পোষ্টমর্টেমের বরাত দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হচ্ছে সেটি সঠিক নয়। পান্নার পরিবার এবং আমরা মনে করি না যে পান্নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইসাহাক আলী খান পান্না মূলত: হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। পান্নার আগে থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। সে নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করতো। ঘটনার সময় তার সাথে ইনহেলার ছিল না। ভারতের ওপারে যাওয়ার পরে পাহাড়ে উঠতে গিয়ে পান্নার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এসময় তিনি বুকে ব্যাথায় বসে পড়েন এবং পরে শুয়ে পড়েন। এসময় হাট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার সময়ে পান্নার সাথে যারা ছিলেন তারাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, পান্নার বড় ভাই জাফর আলী খান পান্নার লাশ দেশে আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে। আশা করা যাচ্ছে ২/৩ দিনের মধ্যে তার মৃতদেহ দেশে আনা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন ইসহাক আলী খান পান্না। সেদিনই তার পিরোজপুর শহরের পাড়েরহাট সড়কের বাসায় ভাংচুর ও আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পিরোজপুরের পৈত্রিক নিবাসে পৃথক দ্বিতল ভবন করেছিলেন পান্না, সেখানেই এই ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।। পান্নার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার চিড়াপাড় গ্রামে।
ইসহাক আলী পান্নার স্ত্রী আইরীন পারভীন বাঁধন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৪৫ বছর বয়সে ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল মারা যান। আইরিন সরকারের উপসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শামসুন্নাহার হলের ভিপি ছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর পান্না আর বিয়ে করেননি। এই দম্পতির ইফতেশাম আফতারি আরিয়ান নামক পুত্র সন্তান রয়েছে। তবে ওই সন্তান পালিত বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ১৯৯৪ সালের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন পান্না। ওই সম্মেলনে সভাপতি ছিলেন একেএম এনামুল হক শামীম। ২০১২ সালের সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক এবং পরে বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য হয়েছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পান্না। অবশ্য পরে ১৪ দলীয় জোটগত নির্বাচনের কারণে সরে যেতে হয় তাকে। পেশাগত জীবনে তিনি বীমা কোম্পানি ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন।