শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য
বর্তমান সরকারের আমলে শিল্প-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক সকল খাতে বাংলাদেশ অর্জন করেছে বিস্ময়কর অগ্রগতি। আর্থ-সামাজিক সকল সূচকে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশিদের ছাড়িয়ে গেছে।
যে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ আর হাড্ডি-কঙ্কালসার মানুষের দেশ হিসেবে, সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘বিস্ময়’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব, অকৃত্রিম দেশপ্রেম, সাধারণ মানুষের প্রতি ভালবাসা ও মমত্ববোধ এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলে।
সারাবিশ্বে চলমান শিল্প বিপ্লবের ধারা শিল্প উৎপাদনে ব্যাপক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এনেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিক টেকনোলজির ব্যবহার শিল্প উৎপাদনের ধারা পাল্টে দিয়েছে এবং পূর্বের তুলনায় উৎপাদনশীলতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের শিল্প-কারখানায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক ধারা তৈরি হয়েছে। সর্বকালে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৬ সালে তৎকালীন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও গ্রাম সহায়তা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালীন সর্বপ্রথম এ অঞ্চলে শিল্প প্রসারে জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে শিল্পায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করে তিনি ১৯৫৭ সালে ইস্ট পাকিস্তান স্মল এন্ড কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজ (ইপসিক) প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতার পরে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে শ্রমঘন শিল্পায়নের ধারা বেগবান করে টেকসই ও সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশব্যাপী শিল্পখাতের কার্যকর বিকাশে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত শিল্পায়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় শিল্পনীতি-২০২২ প্রণয়ন করেছে। পাশাপাশি খাতভিত্তিক পৃথক নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে।
সরকারের গৃহীত শিল্পনীতি ও কর্মসূচির ফলে দেশে টেকসই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পখাত দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিকাশের জন্য সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে দারিদ্র্যমোচন, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক অগ্রগতির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশ থেকে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।
দেশের মোট জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ যাচ্ছে।
গত এক দশকে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে শিল্পখাতের সার্বিক উন্নয়ন ও দেশি-বিদেশি শিল্প স্থাপনকে উৎসাহিতকরণ, পণ্যের গুণগত মান রক্ষা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে শিল্পায়ন ত্বরান্বিতকরণে বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন-২০১৮; জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬, ট্রেডমার্কস আইন ২০০৯, ট্রেডমার্কস বিধি, ২০১৫, শিল্প প্লট বরাদ্দ নীতিমালা ২০১০, লবণ নীতি ২০১১, The Ship Breaking & Ship Recycling Rules২০১১, ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন আইন ২০১৩ ও ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য নিবন্ধন বিধিমালা ২০১৫, ভোজ্য তেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন ২০১৩, রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদানসহ বিভিন্ন নীতিমালা, বিধি আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি-শিল্প) হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।
যারা শিল্পখাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেশের কৃষকদের নিকট স্বল্প মূল্যে ও দ্রুততম সময়ে সার সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি স্থাপন ও বিভিন্ন জেলায় নতুন ১৩ টি বাফার গুদাম স্থাপনের কাজ এগিয়ে গেছে এবং পর্যায়ক্রমে আরো বাফার গুদাম স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। চিনিশিল্প ও লবণ শিল্পের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান সরকার ওষুধশিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে এপিআই শিল্পপার্কসহ নানাবিধ কার্যক্রমের বাস্তবায়ন ও নির্দেশ প্রদান করেছে। দেশ-বিদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৬ প্রণয়ন ও তাদের কার্যক্রমকে গতিশীল করা হয়েছে। সরকারের উন্নয়নমুখী পরিকল্পনা, গতিশীল নেতৃত্বে এবং কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নের পাশাপাশি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালরে কর্মকাণ্ডেও যথেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
সরকার বিভিন্ন বন্ধ থাকা জুট মিল ও টেক্সটাইল মিল পুনরায় চালু করেছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে- আবাসন, জাহাজ, ওষুধ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য শিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ওষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্য-সামগ্রী। তাছাড়া আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদ আর ২-লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। জাতির পিতার হত্যার মাধ্যমে স্তব্ধ হয়ে যায় উন্নয়ন ও অগ্রগতির চাকা।
কিন্তু শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্র এবং কূটকৌশল ভেদ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করে। এর পর এদেশের মানুষের উন্নয়নের ভাগ্যের চাকা থেমে যায়। পরে ২০০৮ সালে সরকার গঠন করেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমজিডি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে ব্যাপক অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে।
পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের ফলে জনগণ সুবিধা ভোগ করছে। আমরা আশা করি ২০৪১ সালের মাধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ পাবে এক উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনের স্বাদ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।