প্রধান সূচি

বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস ও আমাদের ভাবনা

বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস। পাখির আবাসস্থলকে নিরাপদ রাখা ও বিচরণস্থল সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়ে প্রতিবছর সারা বিশ্বে দিবসটি পালন করা হয়। পাখি সম্পর্কে বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৬ সাল থেকে দিবসটি পালন শুরু হয়েছে। প্রতি বছর মে ও অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শনিবার বিশ্ব পাখি দিবস পালিত হয়। বছরে দুইবার এই দিনটি পালিত হয়। বর্তমান বিশ্বের ব্যাপকভাবে শিল্প-কলকারখানা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পাখিদের আবাসস্থল প্রায় ধ্বংসের মুখে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় পাখি সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন। এ কারণে প্রথম ২০০৬ সালে বিশ্বজুড়ে পাখি সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করার জন্য পাখি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পরে ২০০৮ সালে বিশ্ব পাখি দিবসের স্লোগান তৈরি করে এটি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দিনটি পালন করার মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী পাখির গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা। কারণ প্রকৃতি ভারসাম্য রক্ষায় পাখি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেই উপলব্ধি বোধ মানুষের মধ্যে তৈরি করা এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
পরিযায়ী পাখিদের আগে অতিথি পাখি বলা হত। কিন্তু নিবিড় গবেষণায় দেখা গেছে যে, এরা অতিথি নয়। বরং যে দেশে যায় সেখানে তারা ডিম পাড়ে এবং সেখানেই ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করে। শীতকালে বাংলাদেশে যে পাখি গুলোর আগমন ঘটে সে পাখিগুলো পরিযায়ী। এই পাখিগুলো আমাদের দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটায় এবং নির্দিষ্ট কিছু সময় পর পাখিগুলো আবার ফিরে যায়। তাই আমাদের সকলের উচিত এই অতিথিদের অবাধ বিচরণের সুযোগ করে দেওয়া। পরিযায়ী পাখি জীব- বৈচিত্র্যের দূত। এরা পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর জন্য পাখি দিবস পালন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। পাখি দিবস ব্যাপকভাবে পালিত হলে আমরা পাখিদের সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হব।
প্রকৃতির সব থেকে কাছের ও অবিচ্ছেদ্য এক অংশ পাখি। পাখির নামটা শুনলেই হৃদয় মন জুড়ায় না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর রূপটাকে যেমন বাড়িয়ে দিয়েছে তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরিসিম। পরিবেশবান্ধব এই প্রাণীরা মানুষের সুস্থ জীবনধারাকে টিকিয়ে রাখতে সহয়তা করে। পৃথিবীতে প্রায় সব দেশেই পাখির বিচরণ দেখা যায়। বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি রয়েছে। তার মধ্যে বিশাল এক অংশজুড়ে পরিযায়ী পাখিদের অবস্থান। এই পাখিরা নিজের দেশে বছরের মাত্র কিছু সময় অবস্থান করে আর বাকি সময়টা অন্য দেশেই কাটায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে নিজ দেশের ভৌগোলিক অবস্থা। পরিবেশের সাথে নিজেদেরকে তারা মানিয়ে নিতে পারেনা। যার ফলে বংশবৃদ্ধি এবং খাবার সংগ্রহে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এই সমস্যাগুলো এড়িয়ে পাখিরা পছন্দ মত ভিনদেশে পরিযায়ী হয়ে চলে আসে।
প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে বাংলাদেশে দিন দিন পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমছে, যা দেশের সামগ্রিক পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বিশ্বের অসংখ্য দেশের মধ্যে পরিযায়ী পাখিদের জন্য সুন্দর এক আবাসস্থল হচ্ছে বাংলাদেশ। বিস্তীর্ণ সবুজের মাঠ, ফসলের সমারোহ, নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় আর বহুজাতিক উদ্ভিদের পারস্পারিক মিলনাস্থল এই বাংলাদেশ। প্রতি বছর শীতকালে অসংখ্য পরিযায়ী পাখিরা চলে আসে আমাদের দেশে। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বেশিরভাগ পাখির আগমন ঘটে। এসব পাখিরা হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বতের লাদাখ থেকে সেন্ট্রাল এশিয়ান ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এছাড়া ইউরোপ থেকেও এসব পাখি নভেম্বরের দিকে বাংলাদেশে আসে। প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ২৫০-৩০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির আগমনের ঘটে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়, বিল-ঝিলে এইসব পাখিদের প্রচুর বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।
পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিযায়ী পাখির গুরুত্ব অপরিসিম। নদীমাতৃক আমাদের বাংলাদেশ নানা সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পরিযায়ী পাখির কলতান, ডানা ঝাপটানি ও পাখা মেলে উড়ে বেড়ানো প্রকৃতি সৌন্দর্যে যোগ হয় এক নতুন মাত্রা। পাখি প্রকৃতির অলংকার। এ পাখিরা কেবল অতিথি হয়েই আসে না, এরা মূলত একটা দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে থেকে যায় বছরের নির্দিষ্ট সময়। প্রতি বছর দূর দেশ থেকে এই পরিযায়ী পাখিদের আগমন না ঘটলে বাংলাদেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন এবং এদের বিষ্ঠার মাধ্যমে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। তাই পরিযায়ী পাখির সুফল সম্পর্কে জানতে হবে ও তাদের পরিযায়ন যেন সুষ্ঠভাবে হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রকৃতি ও প্রাণীদের রক্ষা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই এদেরকে সংরক্ষণ করা জরুরি। লেখক: সাংবাদিক






উত্তর দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.