দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ
স্বরূপকাঠীতে সড়ক বিভাগের রাস্তার বেহাল অবস্থা
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলায় সড়ক বিভাগের তিনটি রাস্তার প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার জুড়ে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ প্রায় ১০ বছর ধরে রাস্তা তিনটি চলাচলের অনুপযোগী অবস্থায় থাকলেও নজরে আসছেনা এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ওই সড়ক তিনটি হল স্বরূপকাঠি উপজেলার আলকিরহাট থেকে দৈহারী-শ্রীরামকাঠি সড়কের ১০ কিলোমিটার রাস্তা, স্বরূপকাঠি কৃর্তিপাশা সড়কের ১১ কিলোমিটার রাস্তা, স্বরূপকাঠি-নবগ্রাম সড়কের ৯ কিলোমিটার রাস্তা। মোট ৩০ কিলোমিটারে ভাঙ্গাচোড়া বেহাল সড়ক দিয়ে এখন প্রতিদিন হাজার হাজার এলাকাবাসীসহ পন্য বোঝাই যানবাহন নানা দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। তবে পিরোজপুর সড়ক বিভাগ বলছেন, জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে একনেকে বেশ কিছু রাস্তার কাজ পাশ হয়েছে। তারা আশা করছেন বছর খানেকের মধ্যে ওইসব রাস্তার কাজ শুরু হবে।
স্বরূপকাঠীর দৈহারীর ইউপি সদস্য কাঞ্চি বলেন, স্বরূপকাঠির আলকিরহাট থেকে দৈহারী-শ্রীরামকাঠি-পিরোজপুর সড়কটি গত ৭/৮ বছর ধরে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে দৈহারী থেকে উপজেলার মিয়ারহাট বাজারসহ উপজেলা ও জেলা সদরের সাথে যোগাযোগে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাটি এতই ভাঙ্গাচোড়া যে, কোন যানবাহনই সহসা ঢুকতে চাচ্ছেনা ওই রাস্তায়। আসছে বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটি দিয়ে চলাচলে অভাবনীয় কষ্ট আর দুর্ভোগ এখনই ভাবিয়ে তুলছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের ১০ কিলোমিটার পুরো এলাকায়ই পিচ ও খোয়া উঠে বালু বের হয়ে গেছে। কোন কোন জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে বড় গর্তের। এসব জায়গা দিয়ে গাড়ী চলে হেলে-দুলে, আর মানুষজন চলে নাক-মুখ বন্ধ করে। এই শুকনো মৌসুমে ইটের গুড়ো আর বালুকনার ওড়া-উড়িতে একাকার হয়ে উঠে পুরো রাস্তা। এতে প্রায়ই ঘটে চলছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
দৈহারী ইউপি চেয়ারম্যান প্রগতি মন্ডল বলেন, রাস্তাটির অবস্থা খুবই করুন। এটা সড়ক বিভাগের রাস্তা। একবার শুনছিলাম রাস্তাটির কাজ পাশ হয়েছে। এমপি মহোদয়ের ১৫ কোটি টাকার কাজের মধ্যে শুনেছিলাম ওই রাস্তা নাকি হয়ে গেছে। বুঝিনা কি হয়েছে। ওই রাস্তাতো খারাপই, আমার পুরো ইউনিয়ন জুড়েও একই অবস্থা। রাস্তাটি দিয়ে চলাচলে এলাকার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। রাস্তাটি জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন বলে দাবী করেন চেয়ারম্যান।
বরিশাল-স্বরূপকাঠি ভায়া নবগ্রাম সড়কের ৯ কিলোমিটার রাস্তা এবং স্বরূপকাঠি-কৃর্তিপাশা সড়কটিও বেহাল অবস্থায় রয়েছে। প্রতিদিন ওইসব ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষসহ কয়েক শতাধিক বিভিন্ন প্রকারের যানবাহন মাথা সমান বোঝা নিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। রাস্তার পিচ ও খোয়া উঠে রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। সেসব গর্তে বৃষ্টিতে পানি জমে স্থানে স্থানে আবার নালার সৃষ্টি হয়েছে। সেসব গর্তে ও নালায় প্রায়ই গাড়ীর চাকা দেবে ঘটে চলছে দুর্ঘটনা।
স্বরূপকাঠি কৃর্তিপাশা সড়কের ভুক্তভোগী জলাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আশিষ বড়াল বলেন, ‘সড়ক বিভাগের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেছিলাম। তারা বলেছিল রাস্তাটি যতখানি খারাপ রয়েছে তা রিপিআরিং করা হবে এবং ইদেলকাঠির যে ভাঙ্গা ব্রীজটি রয়েছে তা আইরন ব্রীজ করা হবে। বিষয়টি আমি উপজেলা ইউএনও সাহেবকে জানিয়েছি। কিন্তু অধ্যবদি কোন কাজই করা হয় নি।’
স্বরূপকাঠি নবগ্রাম রোডের আটঘর কুড়িয়ানা ইউপি চেয়ারম্যান শেখর কুমার সিকদার বলেন, ঝালকাঠির সাথে তাদের নবগ্রামের সংযোগ সড়কটির কাজ একনেকে পাশ হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব টেন্ডারের মাধ্যমে রাস্তার কাজ শুরু হলে এলাকার মানুষের দীর্ঘ বছরের দুঃখ দুর্দশা ঘুচবে।
ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, জেলা উন্নয়ন মহাসড়ক প্রকল্পে একনেকে বেশ কিছু রাস্তার কাজ পাশ হয়েছে। তাতে ওই সড়কটিও রয়েছে। আশা করছি আগামী বছরে ওই রাস্তার কাজ শুর হবে।
পিরোজপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশী মো. মাসুদ মাহমুদ সুমন বলেন, বরিশালের কড়াপুর হয়ে ভায়া নবগ্রাম-স্বরূপকাঠি সড়কটি জেলা মহাসড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে একনেকে অনুমোদন হয়েছে। ইতোমধ্যে যাবতীয় কাগজপত্রাধি প্রস্তুত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি। আশা করছি সপ্তাহখানেকের মধ্যে এর দরপত্র আহবান করা হবে। রাস্তার খারাপ অংশসহ রাস্তার তিনটি সেতু ও যে কালভার্ট আছে তাও নির্মান করা হবে। প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। নির্বাহী প্রকৌশী বলেন, স্বরূপকাঠির আলকিরহাট থেকে দৈহারী শ্রীরামকাঠি-পিরোজপুর নামের যে সড়কের কথা বলা হচ্ছে সেটি সড়ক বিভাগের পিরোজপুর সড়ক বিভাগের আওতায় নেই। তাই এ সড়কের উন্নয়নের বিষয়ে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
