প্রধান সূচি

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডিমের ভারসাম্যপূর্ণ মূল্য নিশ্চিত করা হবে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ডিমের ভারসাম্যপূর্ণ মূল্য নিশ্চিত করা হবে। এতে উৎপাদনকারী উপকৃত হবে, বিপণনে জড়িতরা উপকৃত হবে এবং ভোক্তারা উপকৃত হবে। আর অসঙ্গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরে রাষ্ট্র উপকৃত হবে। পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাজার ব্যবস্থাপনায় সম্পৃক্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উইং এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডিমের মূল্য বৃদ্ধিজনিত সমস্যার সমাধান করা হবে।
শুক্রবার ঢাকায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে বিশ্ব ডিম দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্স (ওয়াপসা) বাংলাদেশ শাখা ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) যৌথভাবে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, একটা সময় সবাই নিয়মিত ডিম খেতে পারতো না। পোল্ট্রি উৎপাদন খাতে সম্পৃক্তরা এগিয়ে আসায় ডিম ও মাংস উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এটা আমাদের জাতিগতভাবে সহায়তা করেছে, অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে, প্রাণিজ পুষ্টি ও আমিষের চাহিদায় বড় যোগান দিচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে, খাবারের বড় যোগান দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ডিম উৎপাদনে ব্যয় বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে যারা পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। এ খাতে যারা বিনিয়োগ করেছে তাদের ক্ষয়-ক্ষতি ভুলে গেলে চলবে না। পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনে যারা প্রান্তিক পর্যায়ে সম্পৃক্ত তাদের করোনাসহ অন্যান্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নগদ প্রণোদনা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টি, বিচক্ষণতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেমের কারণে করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা আমাদের বিপন্ন অবস্থায় ফেলতে পারেনি।
মন্ত্রী বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে, অসাধু কারবারি আছে, তারা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টি করে। বাজার ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের সাথে পোল্ট্রি বা ডিম উৎপাদনে সম্পৃক্তদের একাকার করে অভিযুক্ত করলে বিষয়টি নির্দয় আচরণ হয়ে যায়। উৎপাদন ও বিপণন দুটি আলাদা অংশ। করোনা ও রমজানের সময় ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থায় কম দামে গরুর মাংস, ডিমসহ অন্যান্য পণ্য আমরা বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেছি। ভর্তুকি না দিয়েও কম দামে অনেক পণ্য সর্বত্র দেওয়া হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্ত কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি নজরদারিতে নিলে আরও ভারসাম্যপূর্ণ মূল্য ডিমের ক্ষেত্রে আসবে।
ডিমের দাম সবার জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে উদ্যোগ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ সময় মন্ত্রী জানান, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আপেক্ষিক। দেশে একেক শ্রেণির মানুষের ক্রয়ক্ষমতা একেক পর্যায়ের। জীবনযাত্রাও ভিন্ন ভিন্ন। রাষ্ট্র পোল্ট্রি খাতে সম্পৃক্তদের সহায়তার চেষ্টা করছে। দেশে কেউ প্রাণী ও মাছের খাবার তৈরির কারখানা বা শিল্প স্থাপন করতে চাইলে সরকার আমদানির কর মওকুফ করে দিচ্ছে। বৈশ্বিক সংকটের সমাধানে সরকারের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সরকারের সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ঘাটতি থাকলে সেটা বিবেচনা করা হবে। সরকারের সাধ্যের মধ্যে পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনে সম্পৃক্তদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, ডিমের মূল্য বৃদ্ধিতে কোথাও সিন্ডিকেট থাকলে বাজার ব্যবস্থাপনার সাথে সম্পৃক্তদের সাথে কথা বলে সেটা দূর করা হবে। মনোপলি ব্যবসার মাধ্যমে ডিমের দাম নির্ধারণ করে জনগণকে জিম্মি করার কোন ব্যবসায়িক প্রচেষ্টা যদি থাকে নিশ্চয়ই সরকার সেটা মেনে নেবে না। পাশাপাশি এটা মনে রাখতে হবে, উৎপাদনে যে প্রকৃত ব্যয় হচ্ছে, যারা প্রচুর বিনিয়োগ করছেন তাদের ব্যয়ের চেয়ে কম মূল্যে ডিম বিক্রি করতে বলা যায় না। অনুরূপভাবে অতি মুনাফালোভীরা ইচ্ছেমতো মুনাফা করবে, আর মানুষকে জিম্মি করে রাখবে এটা করতে দেওয়া হবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিপিআইসিসি ও ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান।
‘ডিম: প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি’ শিরোনামে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান মোল্লা।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. রেয়াজুল হক ও বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব বলেন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য সুপার ফুড ডিম। ডিম হচ্ছে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের উৎকৃষ্ট একটি প্রাণিজ আমিষ। বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেশে ডিমের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। আমরা চাই দেশের মানুষ যেন কম দামে ডিম খেতে পারে। ডিম দিয়ে তৈরি ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য রপ্তানির কথাও ভাবতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতিকীভাবে ডিম খাওয়ান মন্ত্রী।
উল্লেখ্য, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও বাংলাদেশে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ব ডিম দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব ডিম দিবসের শ্লোগান ‘প্রতিদিন একটি ডিম, পুষ্টিময় সারাদিন।






উত্তর দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.