প্রধান সূচি

ভান্ডারিয়ায় নারিকেল চুরির বিরোধে চোরের হামলায় বিএনপি নেতা নিহত : ঘাতক আটক

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ১নং ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শিয়ালকাঠি গ্রামে নারিকেল চুরি নিয়ে বিরোধের জেরে হামলায় নিহত হয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম ঝন্টু (৫০)। তিনি ভান্ডারিয়া উপজেলার ভিটাবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর শিয়ালকাঠী গ্রামের আইউব আলী খলিফার ছেলে এবং ৮নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক।
ঘটনার ৬ ঘন্টা পরে এলাকাবাসী ঘাতক রুবেল খান (৩৫)কে তার ছোট ভাই সানি খানের ঘর থেকে তাকে আটক করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর শিয়ালকাঠী গ্রামের প্রফেসর আব্দুল হালিম উকিল বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪৫টি নারিকেল পেড়ে নেয় একই এলাকার মজিবুর খানের ছেলে রুবেল খান। ঘটনাটি ওই রাতেই হালিম প্রফেসরের ছেলে মাসুদ রানা থানায় অভিযোগ দেন এবং তার স্বজন ৮নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ঝন্টুকে জানায়। ঝন্টু ওই রাতেই রুবেলকে নারিকেল ফিরিয়ে দিতে বলে। রুবেল তা ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ঝন্টুকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯ দিকে ঝন্টু মাসুদদের বাড়ির সামনে গেলে রুবেল তার সাথে থাকা চাকু দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। এত ঝন্টু মারাত্মক জখম হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যাকান্ডের পরপরই অভিযুক্ত রুবেল গা’ঢাকা দেয়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এলাকাবাসী তার ছোট ভাই সানি খানের ঘর থেকে তাকে আটক করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা রুবেলকে গণপিটুনি দেওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা হস্তক্ষেপ করেন এবং থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রুবেল দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল। তার নামে একাধিক অভিযোগ থাকলেও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে সে বারবার পার পেয়ে যায়। কয়েক বছর আগে গুচ্ছগ্রাম এলাকার ফিরোজ বিশ্বাসের ছেলে বাবু বিশ্বাসের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জেরে রুবেল তার বাম চোখ উপড়ে ফেলে। ওই ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। রুবেল এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছে। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এমন ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। তারা দ্রুততম সময়ে বিচার দাবি করেন।
নিহতের মা রিজিয়া বেগম বলেন, আমার ছেলে নাস্তা না খেয়েই ঘর থেকে বের হয়। রাস্তায় যাওয়ার সময় মাসুদের বাড়ির সামনে আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকা রুবেল তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।
নিহতের ছেলে তানভীর হাসান রাকিন বলেন, রুবেল দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল। এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ তুললেও কেউ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। আমার বাবাকে সে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা এই নির্মম হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যে আমার বাবাকে হত্যা করেছে, সেই রুবেলের ফাঁসি হোক।
ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. খায়রুল বাশার জানান, সকালে রেজাউল করিম ঝন্টু নামের এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মাল্টিপল আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের বুকে গভীর জখম ছিল, যা থেকেই তার মৃত্যুর কারণ হতে পারে বলে জানান চিকিৎসক।
ভান্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গির হোসেন জানান, নিহত রেজাউল করিম ঝন্টুর মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত রুবেলকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং বিস্তারিত তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:





উত্তর দিন

Wordpress Social Share Plugin powered by Ultimatelysocial