প্রধান সূচি

সংবাদ সম্মেলনে এম এ সালাম

ভাই ভাইয়ের জায়গায় থাকবে, দলের প্রশ্নে তার সাথে কোন সম্পর্ক নেই

বাগেরহাট জেলা বিএনপি নেতাদের বিরোধিতার মুখে পড়েছেন দলটির সাবেক জেলা সভাপতি ও বাগেরহাট-২ (সদর-কচুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ. এইচ. সেলিম। বাগেরহাট জেলা বিএনপির বর্তমান শীর্ষ নেতারা বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এম এ এইচ সেলিমের বিভিন্ন সমালোচনা করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে এম এ এইচ সেলিমকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, বছরের পর বছর দল ছেড়ে নিষ্ক্রিয় থাকা কাউকে নেতা-কর্মীরা আর গ্রহণ করবে না। বিরোধীতাকারী নেতৃবৃন্দের মধ্যে এম এ এইচ সেলিমের আপন ছোট ভাই ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালামও রয়েছেন। সালাম বর্তমান জেলা কমিটির সমন্বয়ক পদে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সেলিমের আপন ছোট ভাই এম এ সালাম বলেন, এম এ এইচ সেলিম আমার ভাই, কিন্তু তা বাসায়। ভাই ভাইয়ের জায়গায় থাকবে, সেটি আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। ২০০৯ সালের পর দলের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করার পর দলের প্রশ্নে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ষ্পষ্ট করে বলেছেন, গত ৫ আগষ্টের পর যেসব নেতারা বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা করছেন তাদের কোন অবস্থাতেই দলে জায়গা হবে না। বিএনপিতে বিগত ১৬ বছরে যারা রাজনীতির মাঠে ছিলেন, আন্দোলন করেছেন, জেল খেটেছেন, তাদের দল মূল্যায়ন করবে।
তিনি আরও বলেন, সেলিম যখন বিএনপিতে ছিলেন তখন বিএনপি’র দলীয় কর্মকান্ড তার বাড়ি শহরের পুরাতন বাজারের মেহেদীকুঞ্জ থেকে পরিচালিত হতো। পদত্যাগের পর তিনি বলেছিলেন যে, আমি যেহেতু এখন দল করি না, তাই আমার বাড়িতে বসে বিএনপির রাজনীতি পরিচালনা করা যাবে না। ওই বাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছিলো অভিযোগ করে সালাম বলেন, আমি জমি কিনে সেখানে দলের কার্যালয় স্থাপন করে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পর এম এ এইচ সেলিম জেলা বিএনপির সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে দলীয় কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত না থাকার ঘোষণা দেন। ২০০৭ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময়ে তিনি বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জেলখানায় ছিলেন।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক সময়ে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর গত ২৫ ও ২৬ নভেম্বর সাবেক এই বিএনপি নেতার অনুসারীরা তার সম্মানে বাগেরহাটে দুটি সংবর্ধনা সভা আয়োজন করে। এম এ এইচ সেলিম এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠান দুটিতে বিপুল মানুষের সমাগম ঘটে। এর পর থেকে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোয়ালমাঠ এলাকায় সেলিমের ব্যক্তিগত টাকায় গড়ে তোলা মাজেদা বেগম কৃষি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে তার অনুসারিরা আরও একটি নাগরিক সংবর্ধনা আয়োজন করেছে। ঐ অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহŸায়ক প্রকৌশলী এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম অভিযোগ করে বলেন, জেলা বিএনপির পদত্যাগী সাবেক সভাপতি এম এ এইচ সেলিম ৫ আগষ্টের পর গত ২৫ ও ২৬ নভেম্বর এলাকায় ফিরে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলছেন। বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ড এবং নের্তৃবৃন্দ সম্পর্কে প্রকাশ্যে অনাকাঙ্খিত, আপত্তিকর এবং উষ্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন। তার এই বক্তব্যের জন্য বিএনপি প্রতিবাদ জানাচ্ছে, সেই সাথে তার ওই বক্তব্যের জন্য অনতিবিলম্বে তাকে আমরা ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আহŸান জানাচ্ছি।
জেলা বিএনপি’র আহŸায়ক বলেন, সেলিমের সংবর্ধনার একটি পোষ্টারে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তার সাথে আমাদের দলের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি এই ছবি ব্যবহার করতে পারেন না। তিনি বিগত স্বৈরাচারি আওয়ামী লীগের শাসনামলে তাদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে ব্যবসা বানিজ্য করে সুন্দর জীবন যাপন করেছেন। তার এই কর্মকান্ড জেলা বিএনপি কোনভাবেই মেনে নেবে না বলে হুশিঁয়ারি দেন এই নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহŸায়ক খাদেম নিয়ামূল নাসির আলাপ, শেখ শমসের আলী মোহন, আহবায়ক কমিটির সদস্য শেখ শাহেদ আলী রবি, পৌর বিএনপির আহবায়ক এসকেন্দার হোসেনসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর হযরত খান জাহান (র:) এর মাজার সংলগ্ন মাঠে নাগরিক সংবর্ধনায় এম এ এইচ সেলিম অভিযোগ করে বলেছিলেন, বর্তমান জেলা বিএনপি’র যে কমিটি রয়েছে তারা দলের নেতাদের ইচ্ছামত বহিষ্কার করছে। এখানে বর্তমানে বিএনপি’র একাধিক গ্রæপ রয়েছে যা একেকভাবে চলে। দলটির বর্তমান অবস্থা জগাখেচুরিতে পরিনত হয়েছে। এতো যদি বহিষ্কার করেন তাহলে ভবিষ্যতে নির্বাচন করবেন কাকে নিয়ে ?
এসময় তিনি তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাগেরহাট সদর উপজেলার দেপাড়া বাজারে বাবার নামে গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেলায়েত হোসেন ডিগ্রী কলেজের সংবর্ধনা, জেলায় কর্মরত সাংবাদিক ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে মতবিনিময় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় নিহত বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকার ৬ ব্যক্তির পরিবারকে এক লক্ষ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেন।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোয়ালমাঠ এলাকায় সেলিমের ব্যক্তিগত টাকায় মায়ের নামে গড়ে তোলা মাজেদা বেগম কৃষি প্রযুক্তি কলেজে একটি নাগরিক সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়েছে। সেলিমের এসব কর্মকান্ডে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এম এ এইচ সেলিম দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত হয়ে দলে ফেরার পরিকল্পনায় এসব করছেন।
২০০১ সালে বাগেরহাট-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শিল্পপতি এম এ এইচ সেলিম এমপি নির্বাচিত হন। ওই ৫ বছরে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন, যা এলাকার দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ তাকে স্মরণ করে। উন্নয়নের মধ্যে ছিল শহর রক্ষাবাঁধ নির্মান, মসজিদ, মন্দির, ব্রিজ, কালভার্ট, রাস্তাঘাট উল্লেখযোগ্য।






উত্তর দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.