প্রধান সূচি

পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই , আলোচনায় শিক্ষকরা

দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে আছে আন্তর্জাতিক চক্র। তাতে এখন চলছে অন্যরকম রাজনীতি। অতীতের মতো বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে। অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করা হয়নি। তাই বাংলাদেশে এখন পেছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ উন্নয়নের মহাসড়কে আছে বাংলাদেশ। সেই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারি না আমরা বলে জানিয়েছেন দেশের শিক্ষকরা।

শনিবার (১১ নভেম্বর) ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অপরাজনীতির’প্রতিবাদে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানান তারা। এডুকেশেন রিসার্চ এন্ড ডেভেলমেন্ট ফোরাম বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউিটে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

এডুকেশেন রিসার্চ এন্ড ডেভেলমেন্ট ফোরাম বাংলাদশে (ইআরডিএফবি)- এর সিনিয়র সহ সভাপতি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফসের ড. আব্দুল জব্বার খাঁন বলেন, বাংলাদেশে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অপরাজনীতির বিজ বপন করা হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। হত্যাকাণ্ড করেই কিন্তু ক্ষান্ত হয়নি তারা। জাতীয় চার নেতাকে কারাবন্দী করা হয়েছে এবং জেলকোড ভেঙ্গে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের কোন অস্তিত্ব ছিল না। এখানেই শেষ নয়, ইন্ডেমনিটি আইন করে বিচার চাওয়া বন্ধ করা হয়েছিয়েল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে মাত্র তিন বছরে মাথাপিছু আয় রেখে গিয়েছিলেন ৩৬০ ডলার। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত অসাংবিধানিক সরকার ছিল সবসময়। এই ১৬ বছরে মাথাপিছু আয় বেড়েছিল মাত্র ২৩ ডলার। আমরা কি সেই বাংলাদেশে আবার ফিরে যাবো? আমরা কি অসাংবিধানিক কোন পদ্ধতিতে ফিরে যাবো? আজকে মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার। আমরা পিছনে ফিরে যাওয়ার জন্য এতো কষ্ট করে বাংলাদেশ স্বাধীন করিনি। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অপরাজনীতি এসব কিছু আমরা দেখে এসেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদেরকে নিয়ে অন্যরকম রাজনীতি চলছে। এখন আমরা যে অপরাজনীতি, জ্বালাও পোড়াও দেখছি তাতে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম কিভাবে চালু রাখব তা নিয়ে চিন্তিত। আমাদের শিক্ষার্থী কি আগুন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে ক্লাসে আসবে- আমরা এখন সেই আতংকে আছি। জ্বালা আসলে কোথায়- সেটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক চক্র! সম্প্রতি বাংলাদেশে বিভিন্ন মিশন প্রধানরা ভিয়েনা কনভেনশনকে পদদলিত করে একেরপর এক অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এগুলোর নিন্দা জানাই। বাংলাদেশকে বাংলাদেশের মতো সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করতে দিতে হবে। বিদেশি টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অবস্থান পরিষ্কার, একদম শান্তি পূর্ণ অবস্থান।’

এসময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে কোন নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। এটি আমরা এই দেশে আর দেখতে চাই না। যখনই নির্বাচন সংবিধানের বাইরে যাবে তখনই বাংলাদেশ বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবুন্নেসা বলেন, ‘শিশু রাসেলকে যারা হত্যা করেছে তারাই গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ হত্যা করেছে। আমরা চাই না নারায়ে তাকবির বলে কেউ শিক্ষার্থীদের হলে হামলা করে বের করে দিক। বঙ্গবন্ধু সন্ত্রাসের বিপক্ষে ছিলেন, তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কবি ছিলেন। তাকে বলা হতো রাজনীতির কবি।’

আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘তত্ত্বাবোধয়ক সরকারের নির্বাচন নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন। তাহলে ছয় বছরের পূর্ণিমা নির্যাতিত হল কেন? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল বাংলাদেশে অপরাজনীতির চিত্র তাহলে কি আমরা ওখানে ফিরে যাবো? আমরা কি হাওয়া ভবনে, খাম্বার রাজনীতিতে ফিরে যাবো? শুধুমাত্র বিএনপির জ্বালাও পোড়াও রাজনীতির জন্য এদেশ স্বাধীন হয়েছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর আমাদের অবশ্যই খুজতে হবে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জ্বালাও পোড়াও করে যারা মানুষ হত্যা করছে তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, স্বাধীন বাংলাদেশে এই ধরনের অপরাজনীতি, জঙ্গিবাদের কোন ঠাই নাই।’

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘উন্নয়নের মহাসড়কে আছে বাংলাদেশ। সেই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারি না আমরা। পিছনে ফিরে যেতে পারি না আমরা। এই উন্নয়নের মহাসড়ককে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পাশে আমাদের দাঁড়ানো দরকার। সন্ত্রাস কখনও কোন জাতির জন্য কল্যাণকর নয়। এটি অভিশাপ, এই অভিশাপ থেকে আমরা মুক্তি চাই।’

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)-এর উপাচার্য প্রকৌশল শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল যাতে দেশ স্বাধীন না হয়। অতএব তারা এই স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারে নাই। তারা বিভিন্ন আবহ ইঙ্গিতে বিরোধিতা করার চেষ্টা করেছে। তারা আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে প্রথমে সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশ করার কথা বললো, এখন তারা বিশৃঙ্খলা করছে। এখন্ত তারা এটার বিরোধিতা করে না। সুতরাং যারা এদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারে নাই, তারা কোন সময়ই এদেশে সুস্থ রাজনীতির ধারা মেনে নিতে পারে না।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৯৯৬ পর্যন্ত আমরা জানি ইতিহাস অন্যদিকে গিয়েছে, কারণ ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছিল। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। জয় বাংলার পরিবর্তে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ হয়েছিল। বর্তমানে আমাদের ১৫ বছর বয়সী ছেলেটি সেকথা জানে না। সে জানে না সেই সময়ে বিদ্যুৎ কখন আসবে এই চিন্তা ছিল মানুষের মাথায়। আর এখন বিদ্যুৎ যায় না। এগুলো বর্তমানে ১৫ বছরের ছেলেদের জানানো দরকার। আগামী দিনে এই নির্বাচন কেন দরকার?’

ফোরামের সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭০-এর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জনগণ ভোট প্রয়োগ করেছিল। তাকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি। এখন কেন মানবাধিকার শেখানর কথা বলা হচ্ছে। গাঁজায় নিশ্রংস হত্যাকাণ্ড হচ্ছে সেদিকে কারো নজর নেই। আমাদের দেশে একটি অগণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। দেশে গোলমাল, সন্ত্রাস থাকলে তাদের লাভ হয়। তারা অস্ত্রের রাজনীতি করে। সুতরাং আমরা শিক্ষকরা আর ভুল করতে চাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপিসহ যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া জবাব দিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোটারদের ভোট কেন্দ্র আনতে শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে। একই সঙ্গে নতুন ও তরুণ ভোটারদের ভোট কেন্দ্র আনতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে। যদি এমনটা করা যায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রসহ যারা এ দেশের নির্বাচন নিয়ে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে তাদের কঠোর জবাব দেওয়া যাবে।’

বাংলাদশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ও ইআরডিএফবি’র সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভুইয়া। এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস- চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান, চাঁদুপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস- চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নাসিম আক্তার, বাংলাদশে টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল, বাংলাদশে ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোকাদ্দেম হোসেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস- চ্যান্সেলর প্রফসের ড. শামীম আরা হাসান প্রমুখ।






উত্তর দিন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.