৪৫ বছর পর বার কাউন্সিলের নতুন ভবন
দীর্ঘ ৪৫ বছর পর অবশেষে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নতুন ভবন। বর্তমান ভবনটি ভেঙ্গে ফেলে দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)’র সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
দেশের প্রায় ৫০ হাজার আইনজীবীর একমাত্র লাইসেন্সিং ও রেগুলেটরি বডির জন্য এই আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ভবনটি নির্মাণে ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভবনটিতে বার কাউন্সিলের কাজ ছাড়াও আইনজীবী ও বিচারকদের ব্যক্তিগত নথি সংরক্ষণ ও এডভোকেটশিপ সনদ পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হবে। ভবনটি নির্মিত হলে আইনজীবীদের বিচারের জন্য গঠিত পাঁচটি ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দাফতরিক স্থানেরও সংস্থান হবে। এতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশার বহিঃপ্রকাশ হলো এই প্রকল্প। এটি একটি মাইলফলক। ভবনটি হবে আইনজ্ঞদের জন্য ধ্যান ও জ্ঞানের কেন্দ্র।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরো টাকাই যোগান দেয়া হবে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় আইন ও বিচার বিভাগ এবং গণপূর্ত অধিদফতর যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বিধিবদ্ধ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডারের মাধ্যমে গঠিত হয় বার কাউন্সিল। ১৫ জন সদস্য বার কাউন্সিল পরিচালনা করে থাকেন। অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকেন। বাকি ১৪ জন কর্মকর্তা সারাদেশের আইনজীবীদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হন। এছাড়া বার কাউন্সিলের সচিব হিসেবে একজন কর্মরত জেলা ও দায়রা জজকে নিয়োগ দেয় সরকার। আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে বার কাউন্সিলের পরীক্ষা পরিচালনা ও ফলাফল প্রস্তুতের জন্য গঠিত এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন প্রধান বিচারপতি। এছাড়া হাইকোর্টের দুই বিচারককে ওই কমিটির সদস্য নিয়োগও দেন প্রধান বিচারপতি।
১৯৭২ সালে বার কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার সময় দেশে মোট উকিলের সংখ্যা ছিল মাত্র সাত হাজার। নিজস্ব ভবন না থাকায় সরকারি আদেশে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনের চারটি কক্ষে বার কাউন্সিলের কার্যক্রম চলতো। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে কাউন্সিলের নামে হাইকোর্ট সংলগ্ন ৪৪ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়। সেখানেই বর্তমান ভবনটি অবস্থিত। বর্তমানে বার কাউন্সিলে তালিকাভুক্ত উকিলের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। এখন প্রতি বছর প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার নতুন এডভোকেট বার কাউন্সিলের তালিকায় যোগ হচ্ছে। তাই ৪৫ বছর আগে নির্মিত ভবনটিতে স্থান সংকুলান করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
বার কাউন্সিলের স্থান সংকট দূর করার জন্য নতুন ভবনটি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। গত ১১ মার্চ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপি পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৮৩৬ দশমিক ১২ বর্গমিটার আয়তনের দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনের মোট আয়তন হবে ১৩ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৩৭ বর্গমিটার। সীমানা প্রাচীর হবে ১৯৩ দশমিক ৬০ বর্গমিটার। ১০০০ কেভিএ ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতের সাব-স্টেশন নির্মিত হবে একটি। পুরো ভবন জুড়ে থাকবে তিনটি লিফট।
