কর্মস্থল থেকে আটক দুই কনষ্টেবল কারাগারে
নাজিরপুরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে পুলিশে চাকরী গ্রহণ
পিরোজপুরের নাজিরপুরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে চাকরী নেওয়ার অভিযোগে দুইবছর পরে স্ব-স্ব কর্মস্থল থেকে পুলিশের দুই কনষ্টেবল গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর মধ্যে একজন নারী কনষ্টেবল রয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।
২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বর পিরোজপুর পুলিশ লাইনস্ মাঠ থেকে পুলিশের কনষ্টেবল পদে নিয়োগের সময় তারা পিতার নামের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোঠায় পুলিশ কনেস্টবল পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। পরে নিয়মানুযায়ী ৬ মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তারা উভয়ই বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগদান করেন।
ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে চাকুরী নেয়া দু’জন হলেন, নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের চর মাহামুদকান্দা গ্রামের জাকির মোল্লার মেয়ে রুশিয়া বেগম (২১) ও একই গ্রামের দায়জাল মোল্লার ছেলে শরিফুল ইসলাম মোল্লা (২০)।
এ ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মহর আলী সরদার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের বিষয়টি অনুসন্ধান পূর্বক তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অবহিত করেন। অন্যদিকে, পুলিশ হেডকোয়াটার্স মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় নিয়োগপ্রাপ্তদের চুড়ান্তভাবে বাছাইয়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সনদ বাছাইকালে নিয়োগপ্রাপ্ত নারী কনষ্টেবল রুশিয়া বেগম (২১) এবং পুরুষ কনষ্টেবল শরিফুল ইসলাম মোল্লা এর দাখিলকৃত পিতার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ভূয়া ও জাল বলে প্রমানিত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ হেডকোটার্স থেকে বরিশালে কর্মরত উক্ত দুই পুলিশ কনষ্টেবল রুশিয়া বেগম এবং শরিফুল ইসলাম মোল্লার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হলে পিরোজপুর জেলা পুলিশের আরও উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মাসুম বিল্লাহ গত ৯ জুন বাদী হয়ে পিরোজপুর সদর থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর পরে ওই দুই কনেস্টবলকে তাদের কর্মস্থল বরিশাল থেকে গ্রেফতার করে এনে আদালতের মাধ্যমে তাদের জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়।
ঘটনার বিষয়ে জানতে গত বুধবার সকালে উপজেলার চর মাহামুদকান্দা গ্রামে গেলে কথা হয় আটককৃত পুলিশ কনষ্টেবল শরিফুল ইসলামের মা কল্পনা বেগম ও নারী কনষ্টেবল রুশিয়া বেগমের মা রঞ্জিলা বেগমের সাথে। তারা জানান, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বারাসিয়া গ্রামের নোয়াবআলীর ছেলে নান্নু মিয়া তাদের ছেলে-মেয়েকে পুলিশে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে দু’জনের কাছ থেকে মোট ১১ লাখ টাকা নিয়েছে। বিনিময় দুই জনের পিতাকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ বানিয়ে এনে চাকরি দিয়েছে। রঞ্জিলা বেগম ও কল্পনা বেগম আরো জানান, তাদের কারোই স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। আর মুক্তিযোদ্ধা সনদের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। চাকরির আশায় সর্বশেষ সম্বল জমি বিক্রি করে প্রতারক নান্নু মিয়াকে টাকা দিয়ে চাকুরী নিয়েছিল।
পিরোজপুর সদর থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন জানান, এ ঘটনায় জেলা পুলিশের আরও উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) মাসুম বিল্লাহ বাদী হয়ে পিরোজপুর সদর থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। পরে ওই কনেস্টবলকে তাদের কর্মস্থল থেকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
নারী কনষ্টেবল রুশিয়া বেগম গ্রেফতারের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, মামলার তদন্ত কাজ চলছে।
