২০২০ সাল থেকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হবে তামাকের ক্ষতিকর বিষয়সমূহ … শিক্ষামন্ত্রী
বাংলাদেশে প্রতিবছরের মতো এবারও ৩১ মে উদযাপিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ উপলক্ষ্যে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফ্রি কিড্স এর সহায়তায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) যৌথ ভাবে রবিবার ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের এ বছর প্রতিপাদ্য ‘ঞড়নধপপড় ধহফ ঐবধৎঃ উরংবধংবং’ অর্থাৎ ‘তামাক ও হৃদরোগ’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২০ লক্ষ মানুষ তামাক ব্যবহারের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশের হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৩০ শতাংশের জন্যেই দায়ি ধূমপান তথা তামাক ব্যবহার, যা খুবই আশংকাজনক। বাংলাদেশে তামাকের উচ্চ ব্যবহার এই ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। হৃদরোগ মোকাবিলা তথা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণের কোনো বিকল্প নেই। এই সার্বিক বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা এবং করণীয় তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে আগত বক্তারা। অনুষ্ঠানে ‘প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৮’ এর বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবছরের পুরস্কার বিজয়ীরা হলেন, সেরা স্থানীয় পত্রিকা রিপোর্টে মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, চিফ রিপোর্টার, দৈনিক সিলেটের ডাক, সিলেট। সেরা জাতীয় প্রিন্ট/অনলাইন মিডিয়া বিভাগে দৌলত আক্তার মালা, বিশেষ প্রতিবেদক, দি ফাইন্যানশিয়াল এক্সপ্রেস এবং আবুল কাসেম, সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক কালের কন্ঠ এবং সেরা টিভি রিপোর্টে এস এম আতিক, সিনিয়র প্রতিবেদক, এনটিভি। এছাড়াও জুরি বোর্ডের মনোনয়নে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন গোলাম মর্তুজা জুয়েল, চিফ রিপোর্টার, দৈনিক কীর্তনখোলা, বরিশাল (বর্তমানে দৈনিক আজকের পরিবর্তন, বরিশাল এ কর্মরত)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ইতিমধ্যে আগামী বছরের পাঠ্যসূচি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ায় ২০২০ সাল থেকে তামাকের ক্ষতিকর বিষয়সমূহ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যেন শিক্ষার্থীরা নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি তাদের পরিবারও তামাকের ক্ষতির বিষয়ে সচেতন হতে পারে। তিনি আরও বলেন, স্কুল-কলেজের আশেপাশে পাঁচশত মিটারের মধ্যে তামাকপণ্য বিক্রয় বন্ধের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বিশেষ অতিথি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) আব্দুল মালিক বলেন, দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং সবচেয়ে আশংকার বিষয় হচ্ছে ইদানিং ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সিদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ তামাক ব্যবহার।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আত্মা’র সাংবাদিকবৃন্দ ধূমপান এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি আরও বলেন, তামাক ব্যবহারজনিত অসংক্রামক রোগ নির্মূলে স্বল্প বিনিয়োগেই অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতি মোকবিলা সম্ভব। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মর্তুজা হায়দার লিটন, কনভেনর, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) ও চিফ ক্রাইম করস্পনডেন্ট, বিডিনিউজ ২৪.কম।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মো. খায়রুল আলম শেখ, কোঅর্ডিনেটর, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মোজাফফর হোসেন পল্টু, সভাপতি, নাটাব; ডা. মাহফুজুর রহমান ভুঁঞা, গ্রান্টস ম্যানেজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে); এবিএম জুবায়ের, নির্বাহী পরিচালক, প্রজ্ঞা।
অনুষ্ঠানে এ বছরের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য এবং এ সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র কো-অর্ডিনেটর মো. হাসান শাহরিয়ার।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে এ বছর বিশ^ তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য নিয়ে নির্মিত ‘তামাক ও হৃদরোগ’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ।
বিশিষ্ট সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
