এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র বাবদ
পরীক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ
২ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের জন্য জেলার ইন্দুরকানী ও নাজিরপুর উপজেলায় কয়েকটি কলেজের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ স্বীকার করে ইন্দুরকানী উপজেলার পত্তাশী জনকল্যান টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ রিপন চন্দ্র বৈরাগী বলেন, পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সময় কেন্দ্র ফি নেওয়া হয় নাই। তাই এখন তারা কেন্দ্র ফি হিসেবে এই টাকা নিচ্ছেন।
তবে পরিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ফরম পূরণের সময় তারা ধার্যকৃত সকল ফি পরিশোধ করেছেন। প্রতিবছরই পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়ার পূর্বে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছ থেকে এই অতিরিক্ত টাকা আদায় করে।
একই উপজেলার ইন্দুরকানী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান সিকদার জানান, কেন্দ্র ফি হিসেবেই তারা পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই টাকা নিচ্ছেন।
উপজেলার কেসি টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ইউনুস আলী দাবি করেন তার কলেজের শিক্ষার্থীরা দরিদ্র হওয়ায়, ফরম পূরণের সময় কেন্দ্র ফি দিতে পারেনি। তাই এখন কেন্দ্র ফি নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া নাজিরপুরের মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ, গাওখালী কলেজিয়েট স্কুল এবং দীর্ঘা শহীদ জননী মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্র ফি এর নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার মাটিভাঙ্গা ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগের ছাত্র রুবেল হোসেন আবির জানান, প্রবেশপত্র বাবদ কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে নিয়েছেন। ওই শিক্ষার্থী আরো জানান, কলেজের মডেল টেস্ট পরীক্ষা না দেয়ার জরিমানা হিসাবে তাকে আরো ২শ’ টাকা বেশী অর্থাৎ ৭শ’ টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মনির হোসেন দাঁড়িয়া জানান, বোর্ডের নির্ধারিত কেন্দ্র ফি ৩শ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে মাত্র। আর কলেজের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্যই জরিমানা বাবদ আরো ২শ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে।
উপজেলার গাওখালী স্কুল এ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আমিনুল ইসলাম জানান, তাদের কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে সাড়ে ৫শ’, বাণিজ্য বিভাগে সাড়ে ৩শ’ ও মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রবেশ পত্র বাবদ ৩শ’ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাবদ ওই কলেজের গনিত বিভাগের শিক্ষক বিমল দাস প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে আরো ৩শ’ টাকা করে আদায় করেছেন।
এ ব্যাপারে ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ জাফর বাহাদুর জানান, প্রবেশপত্র বাবদ ৩ শ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে। বেশী আদায় করা হয়েছে কিনা তা আমার জানান নেই। আর তথ্যও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাবদ নেয়া টাকা ফেরত দেয়া হবে।
উপজেলার দীর্ঘার শহীদ জননী মহিলা কলেজের ছাত্রীরা জানান, প্রবেশপত্রের জন্য বিজ্ঞান বিভাগে সাড়ে ৫শ’, মানবিক ও বানিজ্যে বিভাগে ৫শ’ টাকা করে নেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ওই কলেজের অধ্যক্ষ বাপ্পি মজুমদার জানান, কেন্দ্র ফি ও ব্যাবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ এ টাকা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া একই অভিযোগ উপজেলার উপজেলার বৈঠাকাটা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও।
তবে ফরম পূরণের পর পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন প্রকার টাকা নেওয়ার সুযোগ নাই বলে জানান বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোঃ আনোয়ারুল আজিম।
তবে এ বিষয়ে কোন কলেজের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রত্যেক পিরোজপুরের প্রত্যেক কলেজ থেকে গড়ে দুই শতাধিকেরও বেশি পরীক্ষার্থী এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। সে হিসেবে কিছু কলেজের প্রত্যেকটি অনায়াসে প্রত্যেক কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এছাড়া এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ফি ৩০০ টাকা যা প্রত্যেক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের সময়ই নেওয়া হয়। এছাড়া ফরম পূরণের সময় সেসশ চার্জ, বেতন, সমাপনী পরীক্ষায় ফেল করাসহ বিভিন্ন খাতে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা নেওয়া হয়। তবে সন্তানকে কোন প্রকার ঝামেলায় ফেলতে না চাওয়ায় এ বিষয়ে কোন অভিভাবক প্রতিবাদ করেন না। এতে করে নির্বিঘেœ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায় করে লাভবান হচ্ছে দুর্নীতিপরায়ন এক শ্রেণির শিক্ষক।
