প্রধান সূচি

ঝুঁকি নিয়ে চলছে বেকুটিয়া ফেরি

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এক বছরে শতাধিকবার কাউখালীর বেকুটিয়া ঘাটের ফেরি বিকল হয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। বর্তমানে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন পারাপার করছে এই ফেরিটি। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

ঘাটের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউটিলিটি ৩৬ ফেরি আগে ত্রুটির কারণে প্রতি মাসে ৮-১০ বার বিকল হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রায় প্রতিদিনই বিকল হচ্ছে। ১৬ অক্টোবর বিকেলে ফেরিটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুই ঘণ্টা চলাচল বন্ধ থাকে। ১৭ অক্টোবর বিকেল চারটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ফেরিটি আবার বিকল ছিল। তখন ইউটিলিটি ২৫ ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার শুরু হয়। একপর্যায়ে সেটিও বিকল হয়ে পড়ে। ২০ অক্টোবর বিকেলে ইউটিলিটি ৩৬ ফেরি নদীর মধ্যে বিকল হয়ে পড়ে। পরদিন বেলা ১১টার দিকে সেটি মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হয়। টানা ২০ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় নদীর দুই প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ সারি পড়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়ে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক পথে যাতায়াতকারী কয়েক হাজার মানুষ। ২০ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ইউটিলিটি ৩৬ ফেরিটি প্রতিদিনই বিকল হয়েছে। ২৬ অক্টোবর রাত আটটা থেকে পরদিন ভোর ছয়টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। আট দিন বিরতি দিয়ে ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় সেটি আবার বিকল হয়ে পড়ে।

ফেরি বিকল হয়ে যানজটে পড়েন বরিশাল-খুলনা পথের অঙ্গীকার পরিবহনের একটি বাসের চালক আবুল কালাম। তিনি বলেন, একটি ইঞ্জিন অকেজো থাকায় কম গতিতে ফেরি চলাচলের কারণে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। ফেরি পেতে তাঁকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বরিশাল-পিরোজপুর-খুলনা সড়কের ১২টি পথে প্রতিদিন চার শতাধিক যানবাহন চলে। ফেরি ঘন ঘন বিকল হয়ে যাওয়ায় চালক ও যাত্রীদের এই পথে চলা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর দুই প্রান্ত  কাউখালীর বেকুটিয়া ও পিরোজপুরের কুমিরমারা এলাকায় বাস, মালবাহী ট্রাকসহ যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ইউটিলিটি ৩৬ ফেরিটিতে ঘাটের কুমিরমারা এলাকায় মেরামতের কাজ চলছে। ফেরির পাশে নিচের অংশে একাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে, ডেকও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জার্মানিতে নির্মিত এই ফেরির ইঞ্জিনগুলো দুই দশক আগে বাংলাদেশে আনা হয়। সাধারণত ২০-২৫ বছর চলার পর ফেরির অশ্বশক্তি কমতে থাকে। বেকুটিয়া ঘাটের দুটি ফেরির একটি ৩১৫ অশ্বশক্তির (ইউটিলিটি ৩৬)। অপরটি ১৯০ অশ্বশক্তির (ইউটিলিটি ২৫)। তেল সাশ্রয়ের জন্য দ্রুতগতির ফেরিটি ব্যবহার করা হয়। ফলে সেটির ওপর চাপ পড়েছে বেশি। সেটির ইঞ্জিন প্রায়ই বিকল হয়ে যাচ্ছে। এখন জোড়াতালি দিয়ে যানবাহন পারাপার চলছে।

সওজ বিভাগের পিরোজপুর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী হামিদুর রহমান বলেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন বহন করায় ফেরি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এ ছাড়া নদীর  ¯্রােত ও কচুরিপানার কারণে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে।

কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, বেকুটিয়া ঘাটে নতুন ফেরি পেতে সওজের ফেরি বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্রুত নতুন ফেরি পাওয়ার জন্য তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন।

বরিশাল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী (ফেরি বিভাগ) শামিমুল আহসান বলেন, প্রতি মাসে ইউটিলিটি ৩৬ ফেরির দুবার করে ইঞ্জিন প্রতিস্থাপন করতে হয়। এ ছাড়া কয়েক দিন পরপর ফেরি মেরামত করতে হচ্ছে। এতে প্রতি মাসে ফেরি মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজেই ব্যয় হচ্ছে ২০ লাখ টাকা। বেকুটিয়ার ফেরিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন বসাতে ঊর্ধ্বত কর্তৃপক্ষকে বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে। নতুন ইঞ্জিন পেলে আর ঝামেলা থাকবে না।

Please follow and like us:





উত্তর দিন

Wordpress Social Share Plugin powered by Ultimatelysocial