প্রধান সূচি

মাদক ব্যবসা না ছাড়লে জায়গা হবে জেলখানাতে … ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বিপিএম

বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম বিপিএম বলেছেন, পাঁচ জন মাদক ব্যবসায়ীকে এ ব্যবসা থেকে দূরে রাখতে পারলে কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানুষকে নিরাপদে রাখা যাবে। কেননা তারা যদি মাদক বিক্রি না করে তাহলে মাদকসেবীরাও মাদক ক্রয় করতে পারবে না। এলাকায় মাদক সেবনকারীও থাকবে না।

পিরোজপুরে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের আত্মসমর্পন এবং পূর্নবাসনসহ কমিউনিটি পুলিশিং ও জঙ্গিবাদ বিরোধী এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার লক্ষে জেলা পুলিশের আয়োজনে আজ বুধবার বিকেলে পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ৭৩ জন মাদকসেবী ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলামের কাছে আত্মসমর্পন করেন এবং মাদক বিরোধী শপথ বাক্য পাঠ করেন।

ডিআইজি আরও বলেন, মাদক ব্যবসা করে সহজে যেভাবে আয় করা যায়, অন্য ব্যবসা থেকে তা যায় না। তাই মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের কাছে ধরা পড়লে, জেলে গিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে তাদের খরচ চালানোরজন্য আবারও মাদক ব্যবসা শুরু করে। সেক্ষেত্রে মাদক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা গেলে তারা মাদক ব্যবসা থেকে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু মাদক ব্যবসা না ছাড়লে জায়গা হবে জেলখানাতেই। আর ছেড়ে আসলে পূর্নবাসন সহায়তা দেয়া হবে। অন্যদিকে যারা মাদক সেবনে জড়ায় তারা কিছুদিন পর রোগী হয়ে যায়। তাই মাদকসেবনকারীদের চিকিৎসা দিয়ে তাদেরকেও এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ বাহিনী।

তিনি বলেন, মাদক সেবনের হাতে খড়ি হয় সিগারেটের মাধ্যমে। বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দেখেছি, অনেক অভিযান চালিয়েছি তারপরও মাদক ব্যবসা বন্ধ হয়নি। দেখা গেছে মাদক ব্যবসায়ীরা জেলখানা থেকে বের হওয়ার পর আবার মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে যায়। অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফেরানোর জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সমাবেশে ডিআইজি আরও বলেন, পুলিশের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে মাদকের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে আপনারা তথ্য যাচাই করুন, পুলিশকে জানান।

তিনি বলেন, পুলিশের সাথে ভালো মানুষের কোনও দূরত্ব থাকবে না। এজন্য কমিউনিটি পুলিশিং, ষ্টুডেন্ট পুলিশিং, বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সহযোগিতা নিয়ে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ নির্মূল করে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করতে হবে।

সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি একটি উদাহরণ হিসেবে বলেন, ‘আমার নিকটাত্মীয় ইংল্যান্ডে থাকতো তার বাবা প্রফেসর। মাদক সেবনের কারণে সে আজ অন্ধ।

পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সেখ, পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মহারাজ, পিরোজপুরের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আবুবকর সিদ্দিক, পিরোজপুর জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি ও পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র মো. হাবিবুর রহমান মালেক, পিরোজপুরের সিভিল সার্জন মো. ফারুক আলম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খান মো. আলাউদ্দিন,  পিরোজপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফসিউল ইসলাম বাচ্চু, বাংলাদেশ চলচিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।

সভার শুরুতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৪৭ জন মাদক ব্যবসায়ী ও ২৬ জন মাদকসেবীকে ফুল দিয়ে বরণ করেন পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম। এরপর তিনি তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান।

সমাবেশ শেষে মাদক সেবন বা ব্যবসা ছেড়ে যারা শপথ নিয়েছেন পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের পুনর্বাসন সহায়তা হিসেবে রিকশাভ্যান ও সেলাই মেশিনসহ বিভিন্ন উপকরণ দেয়া হয়। সভার শুরুতে প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

এর আগে বেলা তিন টায় ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সিও অফিস মোড়ের বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে একটি মাদক বিরোধী সাইকেল র‌্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশস্থলে গিয়ে শেষ হয়।

Please follow and like us:





উত্তর দিন

Wordpress Social Share Plugin powered by Ultimatelysocial