নাজিরপুরে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আ’লীগ প্রার্থীর পক্ষে জনসভা।। স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাংচুরসহ কর্মীদের মারধরের অভিযোগ
নাজিরপুর প্রতিনিধি :
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১৬ এপ্রিল। এ তিনটি ইউনিয়নের একটিতে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন ও দু’টি ইউনিয়নে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্গন করে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জনসভা করাসহ এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও কর্মী সর্মথকদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, শুক্রবার আওয়ামী লীগের উদ্যোগে উপজেলার শ্রীরামকাঠী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জগদ্বিশ চন্দ্র হালদারের সভাপতিত্বে স্থানীয় শ্রীরামকাঠী বাজারে জঙ্গি বিরোধী পথ সভার নামে ওই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী উত্তম কুমার মৈত্রের এক নির্বাচনী জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট হাকিম হাওলাদার। প্রায় ২ হাজার নারী-পুরুষ এ সভায় উপস্থিতি ছিলেন। এ দিন বিকাল ৩ টায় শুরু হওয়া এ সভা চলে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত। এ জনসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উত্তম কুমার মৈত্রের উপস্থিতিতেই তার পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ শাহজাহান খান তালুকদার, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য চন্ডিচরন পাল, অমূল্য রঞ্জন হালদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম হিরু, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান শামীম, নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন খান, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এম খোকন কাজী, ছাত্রলীগ সভাপতি তানভীর হাসান ডালিম প্রমুখ।
প্রত্যক্ষদর্শী এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, ওই জনসভায় নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্গন করে প্রকাশ্যে ২টি বিদেশী শর্টগান নিয়ে জনসভায় আসেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেযারম্যান মুজিবুর রহমান শামীম। এ সময় তার সাথে থাকা দেহরক্ষীরা থানা পুলিশের সামনেই আগ্নেয়াস্ত্র বহন করছিলেন। ওই আগ্নেয়াস্ত্র দেখে স্থানীয় সাধারণ ভোটারা আতংকিত হয়ে পড়েন।
এদিকে আজ শনিবার বেলা ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলাউদ্দিন বাহাদুরের কর্মী-সর্মথকরা আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব নান্না মিয়ার কোকরাকাঠি ব্রীজ ও চাঁনদকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং খলনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন তিনটি নির্বাচনী কার্যালয়ের আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং আনারস প্রতীকের পোষ্টার ছিড়ে ফেলে। এ সময় তারা ওই নির্বাচনী কার্যালয়ে থাকা আনারস প্রতীকের কর্মী-সর্মথকদের মারধর করে। এতে ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন গাউস, উপজেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক জাহিদ হোসেন, ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল ইসলামসহ ১২ জন আহত হন।
এ বিষয়ে আনারস প্রতীকের প্রার্থী নান্না মিয়া অভিযোগ করে বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আলাউদ্দিনের ছেলে ডিএমপি’র সহকারী পুলিশ কমিশনার আনিচ উদ্দীন বাহাদুর। তার নির্দেশেই নৌকার কর্মী-সমর্থকরা আমার তিনটি নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করে ও এক মুক্তিযোদ্ধাসহ ১২/১৩জন কর্মীকে মারপিট করে।
আনিচ উদ্দীন বাহাদুর সাংবাদিকদের বলেন, ভাংচুরের কথা আমি শুনিনি। আমার বাবার নির্বাচন উপলক্ষে ছুটিতে বাড়ি এসেছি।
এদিকে গতকাল শনিবার দুপুরে যখন এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটে তখন নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলাউদ্দীন বাহাদুর পিরোজপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ দলীয় স্থানীয় এমপি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী নান্না মিয়াকে সমর্থন দিয়েছেন। নান্না মিয়া কালো টাকার প্রভাব বিস্তার করছেন।
এ ব্যাপারে নাজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ হাবিবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি মোবাইল ফোনে শুনে সেখানে দায়িত্বপালনকারী পুলিশ পাঠালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা চলে যান।
আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারী চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শামীম মোবাইল ফোনে সংবাদিকদের জানান, আজম আলী ও জাবের আলী নামে ২ ব্যক্তির বহনকরা ওই আগ্নেয়ান্ত্র ২টি তার নামে লাইসেন্স করা। তিনি ওই দিন সেখানে জঙ্গি বিরোধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি সারা দেশের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষেই ভোট চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন চলাকালীন সময়ে কোন বৈধ আগ্নেযাস্ত্র নিয়েও নির্বাচনী প্রচারণা বা সমাবেশ করা নির্বাচন আচরনবিধি লঙ্গনের সামিল। এ ব্যাপারে এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
