বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আজ
॥ ফসিউল ইসলাম বাচ্চু ॥
আজ ১৭ই মার্চ। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিবস। আজ জাতীয় শিশু দিবসও। ১৯২০ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। খোকা নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসাবে।
আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু’র যখন জন্ম হয় তখন ছিল ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। গ্রামের স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তাঁর বিপ্লবী জীবন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামীয়া কলেজে (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশ নামকরা ছিল। এই কলেজ থেকে সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে অর্থাৎ দেশবিভাগের বছর এ কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রী লাভ করেন। সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে গঠন করেন ছাত্রলীগ। পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। যার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন। ১৯৩৮ সালে আঠারো বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু’র সাথে বেগম ফজিলাতুন্নেসার বিয়ে হয়। এই দম্পতির ঘরে দুই কন্যা এবং তিন পুত্রের জন্ম হয়। কন্যারা হলেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। আর পুত্ররা হলেন শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। কালের পরিক্রমায় কখনো ভাষার জন্য, কখনো স্বাধিকারের জন্য চলতে থাকে আন্দোলন। এসবের আড়ালে গড়ে উঠে স্বাধীনতার আন্দোলন। ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” বঙ্গবন্ধু’র এই ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৭১’র ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে নিরস্ত্র বাঙালির উপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কারাগারে আটক রেখে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী তাঁর প্রথম বিচার শুরু করে। তার নির্দেশনা মোতাবেক ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। ৭২’র ১০ জানুয়ারি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু সেই সুযোগ বেশিদিন পাননি তিনি। ১৯৭৫ সালে জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি তথা একটি শোষণমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তিনি জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই ৭৫’র ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বঙ্গবন্ধু’র জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। দিনটি পালন উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধু’র জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালন উপলক্ষে পিরোজপুরে জেলা ও জেলা শিশু একাডেমী ১৭ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী শিশু আনন্দ মেলাসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোও বঙ্গবন্ধু’র জন্মদিন পালনে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও জেলা শিল্পকলা একাডেমীর যৌথ উদ্যোগে আজ শুক্রবার সকাল ৯ টায় শহরের সিও অফিস মোড়স্থ বঙ্গবন্ধু চত্বরে শিশু ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। পরে এখান থেকে র্যালী বের হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে র্যালীটি শেষ হবে। র্যালী শেষে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে জাতীয় শিশু দিবস ও শিশু আনন্দ মেলার উদ্বোধন করা হবে।
তিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কুইজ প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগিতা, শিশু নাট্য প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধু’র জীবন ভিত্তিক শিশু চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শিশু আনন্দ মেলার সমাপনী দিনে আগামী ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, র্যালী ও আলোচনা সভা।
