কোথাও কোন বাঁশের সাঁকো থাকবে না, নির্মিত হবে ব্রীজ-কালভার্ট ….. আনোয়ার হোসেন মঞ্জু
সাইফুল্লাহ হুমায়ুন ও রবিউল হাসান রবিন, কাউখালী :
জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেছেন, সরকার গ্রামীণ যোগাযোগ খাতে যেভাবে মনোযোগ দিয়েছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে দেশের কোথাও কোন বাঁশের সাঁকো থাকবে না, সড়কে সড়কে ব্রীজ-কালভার্ট নির্মিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশে বর্তমানে যে প্রভূত উন্নয়ন কর্মকান্ড সাধন করছে তার মধ্যে কৃষি খাত সব চেয়ে বেশী অগ্রাধিকার পাচ্ছে। আল্লাহর রহমতে ও নিজেদের সৌভাগ্যে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এ উন্নয়নের সর্বাধিক সুফলের অংশীদার।
আজ বৃহস্পতিবার পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, সরকার চার লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট নিয়ে কাজ করছে। আগে দেশের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গার কারণে বেশী বেশী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হতো। সে অঞ্চলের উন্নয়ন চাহিদা বহুলাংশে পূরণ হওয়ায় সরকার দক্ষিণাঞ্চলের প্রতি অধিকতর মনোযোগী হয়ে উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। কৃষির পাশাপাশি এখানকার মৎস্য খাতও প্রাধান্য পাচ্ছে। সাথে রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সেবা, জলবায়ূ পরিবর্তনের অভিযোজন, বিদ্যুৎ খাত গুলির সমান হারে গুরুত্ব পেয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা গতানুগতিক রাজনীতি পছন্দ করি না। প্রচলিত রাজনৈতিক অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে এবং নতুনদের আগামী দিনের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য যোগ্য করে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, ৩২/৩৩ বছর আগে আমরা যখন এই এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যাপৃত হয়েছিলাম, তখন দেশের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ সীমিত অর্থ সম্পদ নিয়ে কাজ করতে শুরু করার পর আজকের উপলব্ধি হয়েছে মানুষ এখনও অনেক সচেতন। জনগণের জ্ঞান-বুদ্ধি-ধারণা অভিজ্ঞতা অনেক বেশী সমৃদ্ধ। এই চেতনা বোধকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প গুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করতে জনগণ ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্বকে কাজের প্রতি নজরদারী করা প্রয়োজন। সরকার বরাদ্দ প্রদান, প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কর্তৃপক্ষ হলেও সাধারণ জনগণই হচ্ছে এ সবের উপকারভোগী। নিজেরা নিজেদের অধিকার ও ন্যায্য প্রাপ্যকে বুঝে নিতে না পারলে তার ভূক্তভোগী হতে হয় জনগণকেই। এ ক্ষেত্রে ঐক্য ও সচেতন অবস্থান নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করে রাজনৈতিক বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদের অধিকার আদায় করতে হবে। আনোয়ার হোসেন বলেন, শুধু জনগণকেই অধিকার সচেতন হলে চলবে না সরকারি কর্মকর্তাদেরও দায়িত্বশীল, কর্তব্য পরায়ন ও নিষ্ঠাবান হওয়া আবশ্যক। উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সরকারের কাছে উন্নয়ন চাহিদা সঠিক ও যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে। আমরা যারা সরকারে রয়েছি তারা যদি যথা সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এলাকার অভাব অভিযোগ সম্পর্কে অবগত না হই তাহলে আমাদের কেন্দ্র থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায় করে আনতে সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। তাই যথা সময় স্থানীয় বিভাগ গুলো থেকে উন্নয়ন চাহিদা আমাদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বৃহস্পতিবার বিকেলে কাউখালী উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে পৃথকভাবে আইন শৃঙ্খলা কমিটি, উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা কমিটি এবং উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায়ও বক্তব্য রাখেন। এর আগে তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগ আয়োজিত কৃষি ও প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন করেন এবং মেলার বিভিন্ন ষ্টল ঘুরে দেখেন। এরপর এখানে মন্ত্রী কাউখালী উপজেলার সুবিধা বঞ্চিত ব্যক্তি ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রীর ঐচ্ছিক তহবিলের অর্থের চেক বিতরণ করেন। এসময় ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলের অর্থের চেক বিতরণ, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ঢেউ টিন ও অর্থের চেক এবং জলবায়ূ ট্রাষ্ট ফান্ড নির্মিত, ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন।
এর আগে তিনি সমাজ সেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রতিবন্ধী থেরাপী ভ্রাম্যমান ভ্যানের সেবার উদ্বোধন করেন। এ সময় মন্ত্রী কাউখালী সদর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে দু’টি মিনি এ্যাম্বুলেন্সের চাবি হস্তান্তর করেন। পরিবেশ ও বন মন্ত্রী সদর ইউনিয়ন পরিষদ উদ্যোগে কাউখালী সিটি গেট ছাড়াও সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাউখালী শিয়ালকাঠি ভান্ডারিয়া রাস্তার মেরামত কাজের উদ্বোধন, চিড়াপাড়া-পারসাতুরিয়া ইউনিয়নের জিবগা সাতুরিয়া খালের উপর এবং শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের কাচারী খালের উপর দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দু’টি নবনির্মিত ব্রীজের উদ্বোধন করেন। এসব কর্মসূচিতে পিরোজপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নজরুল ইসলাম, কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আহসান কবির, উপজেলা নির্বাহী অফিসার লাবনী চাকমা, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রশীদ মিল্টন, শিয়ালকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান সিকদার দেলোয়ার হোসেন, চিড়াপাড়া-পারসাতুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ খান খোকন, আমড়াজুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শামসুদ্দোহা চাঁদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যার পর মন্ত্রী কাউখালী সদর ইউনিয়নের কাঠালিয়া পিজিএস বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। এ দু’টি আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইসাহাক আলী খান পান্না, সদর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রশীদ মিল্টন প্রমুখ।
রাতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু কাউখালী কলেজের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। এর আগে মন্ত্রী কাউখালী কলেজের নব নির্মিত একাডেমিক ভবনের উদ্বোধন করেন। এ সময় অনুষ্ঠিত দোয়া ও মোনাজাতে আরও অংশ নেন সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী মোঃ মতিউর রহমানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
বৃহস্পতিবার কাউখালীর বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ কালে তাঁর সাথে ছিলেন ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা জেপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুল ইসলাম তালুকদার উজ্জল, কেন্দ্রীয় যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় জেপি’র সাংস্কৃতিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির তালুকদার রাজু, ভান্ডারিয়া উপজেলা জেপি’র সদস্য সচিব ও ধাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু, কেন্দ্রীয় জেপি নেতা ইউসুফ আলী আকন, কাউখালী উপজেলা জেপি’র সভাপতি মাহবুবুর রহমান খান, উপজেলা জেপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম নসু প্রমুখ।
