মঠবাড়িয়ায় এমপি’র সমাবেশে যোগ দিতে স্কুল ছুটি !
মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি :
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আজ মঙ্গলবার আমড়াগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাশ ছুটি দিয়ে স্থানীয় এমপির একটি সমাবেশে যোগ দিয়েছেন শিক্ষকরা। ফলে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
মঠবাড়িয়া পৌর শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে মঙ্গলবার দুপুর একটায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষে তালা ঝুলছে। এসময় বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি মোশারেফ হোসেন শরীফ অভিযোগ করে বলেন, আজ মঙ্গলবার বিকেল তিনটায় পিরোজপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডাঃ রুস্তম আলী ফরাজী’র পৌর শহরের শহীদ মোস্তফা খেলার মাঠে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাহমুদুল আলম উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সকাল ১১টায় স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। এতে বিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে ৪’শ শিক্ষার্থী ক্লাশ না করে বাড়ি ফিরে যায়।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মজিবুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীরা ক্লাশ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় এলাকায় অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাহমুদুল আলম উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বিদ্যালয় ছুটির দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এমপি’র সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন ও কম্পিউটার ল্যাব দাবী করার জন্য বিদ্যালয় ছুটি দেয়া হয়েছিল।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিক উদ্দিন টেনিং এ থাকায় একাডেমিক সুপারভাইজার মোঃ রুহুল আমীন জানান, কি কারনে বিদ্যালয় ছুটি দেয়া হয়েছে তার জবাব দিতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম ফরিদ উদ্দিন জানান, বিদ্যালয় ছুটি দেয়ার বিষয়টি শুনে তাৎক্ষনিক একাডেমিক সুপারভাইজারকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া প্রধান শিক্ষক ছুটি দিয়েছেন কিনা তা তদন্ত করে লিখিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমানিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান জানান, পাঠদান বন্ধ রেখে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে এমপির সমাবেশে যোগদান বেআইনি। বিষয়নি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
স্কুল ছুটি দিয়ে জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়ে পিরোজপুর-৩ আসনের এমপি ডাঃ রুস্তুম আলী ফরাজী বলেন, আমার প্রোগ্রামটি ছিল জনতার মুখোমুখি হয়ে সরাসরি প্রশ্ন উত্তর প্রোগ্রাম। একটা শিক্ষনীয় প্রোগ্রাম। এটা কোন রাজনৈতিক প্রোগ্রাম না। আর সেখানে সকালে স্কুল ছুটি দেয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা। কেননা আমার প্রোগ্রামটি ছিল বিকেল ৫ টায়। স্কুল ছুটি হয় বিকেল ৪ টায়। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই স্কুল ছুটি হওয়ার পর শিক্ষকরা প্রোগ্রামে আসতে পারে। তাছাড়া আদৌ স্কুল ছুটি দিয়েছিল কিনা তাও আমি জানিনা। আর যেহেতু জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আনয়ণের প্রোগ্রাম সেক্ষেত্রে ছাত্ররা যদি প্রোগ্রামে এসে থাকলে হয়তো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দিয়েই ছুটি নিয়ে এসেছে। তবে বিষয়টি আমি জানিনা।
এ সময় এমপি বলেন, যে স্কুলের কথা বলা হয়েছে সে স্কুলের ম্যানিজিং কমিটি নিয়ে ঝামেলা আছে। কমিটি নিয়ে আদালতে মামলাও আছে। কমিটির লোকজনের সাথে প্রধান শিক্ষকের বিরোধ রয়েছে। প্রধান শিক্ষককে হয়রানী ও বিপদে ফেলার জন্যও একটি গ্রুপ উঠেপড়ে লেগে আছে।
উল্লেখ্য, জনপ্রতিনিধিদের জনগনের কাছে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছ রাজনীতির স্বার্থে জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠান উপলক্ষে এমপি রুস্তুম আলী ফরাজী এ সমাবেশের আয়োজন করেন।
